দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো ভ্রমণের সম্ভাব্য সকল সমস্যা সম্পর্কে জানাতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সংকটগুলোর মধ্যে কয়েকটি খুবই ভয়ংকর, যা আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে সম্পূর্ণ নষ্ট করে দিতে পারে। আর বাকিগুলো ততটা গুরুতর নয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে পর্যটকদের জন্য অনেক আকর্ষণীয় গন্তব্য রয়েছে।
এসকল স্থানে ভ্রমণে অপেক্ষমাণ সংকটগুলো আগে থেকেই জেনে রাখা জরুরী। এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষই বন্ধু সুলভ, তবে এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয় যারা আপনাকে নিছক ১০০ ডলারের বিল হিসেবে দেখবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ভ্রমণের সব সংকট, পরিত্রাণের উপায়ের ৩ পর্বের দ্বিতীয় পর্ব থাকছে আজ।
৬. মানি এক্সচেঞ্জ স্ক্যাম
বিদেশ সফরে মানি এক্সচেঞ্জের দ্বারস্থ হতেই হয়। এসময় ডলার কেনা, ভাঙানো সাধারণ ঘটনা। আর এরই সুযোগ নিয়ে থাকে মানি এক্সচেঞ্জের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যে সকল দেশে মুদ্রার মূল্য খুব দ্রুত পড়ে যায় সেই সকল দেশে মানি এক্সচেঞ্জ স্ক্যামের প্রকোপ বেশি। যেমন ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া।
এই সকল দেশে কয়েক শত মার্কিন ডলারের বিনিময়ে আপনি কয়েক মিলিয়ন দেশীয় মুদ্রা পাবেন। আপনার সামনে গুনেই তারা মানি এক্সচেঞ্জ করে দেবে। আর হোটেলে ফিরে ভালো করে গুনে হয়তো দেখবেন প্রাপ্য অর্ধেক অর্থও তারা আপনাকে দেয়নি।
পরিত্রাণের উপায়
আপনার সামনেই নোট গুনে ধোঁকা দিতে মানি এক্সচেঞ্জের এই লোকজন বিশেষ দক্ষ। তাদের দ্রুত আর দক্ষ হাতকে অনুসরণ করা হয়তো আপনার জন্য সম্ভব হবে না। তাই যত বড় অংকের মুদ্রাই হোক না কেন সেখানেই মানি এক্সচেঞ্জের লোকজনের সামনেই নোট নিজে গুনে আপনার প্রাপ্য বুঝে নিন।

৭. সস্তা রেস্তোরাঁ
এই সংকটের শুরু হয় যখন কোনো পর্যটন কেন্দ্রের কাছাকাছি বন্ধু সুলভ স্থানীয় কারো সঙ্গে দেখা হয়। এরা সাধারণত অত্যন্ত মিশুক ও বন্ধুত্বপূর্ণ। কিছুক্ষণের খোশ গল্পের পর এরা ভালো এবং সস্তায় স্থানীয় খাবার পাওয়া যায় এমন রেস্তোরাঁয় নিয়ে যাওয়ার কথা বলবে। এদের আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়া মানে সব কিছুই হারানো। কেননা নতুন কোনো স্থানে জানার সুযোগ নেই ওই লোকের সঙ্গে রেস্তোরাঁরা মালিকের যে যোগাযোগ রয়েছে।
যারা একসঙ্গে একটি র্যাকেট চালাচ্ছে। আপনার খাবারে তারা যে কোনো ঘুমের ঔষধ কিংবা মাদক মিশিয়ে দিতে পারে। এসকল রেস্তোরাঁয় খাবার খাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর হয়তো নিজেকে নির্জন কোনো স্থানে অচেতন অবস্থায় আবিষ্কার করবেন। ততক্ষণে আপনার সকল অর্থ যে তারা হাতিয়ে নিয়ে যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পরিত্রাণের উপায়
এই ধরনের দুর্ঘটনা সাধারণত ঘটে না। কেননা অনেক মানুষ আসলেই সাহায্য করতে চায়। এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে বন্ধুত্বপূর্ণ স্থানীয়দের আমন্ত্রণ এড়িয়ে চলুন।

৮. টুরিস্ট তথ্য অফিস
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব দেশেই ‘Tourist Information’ চিহ্ন সংবলিত অফিসগুলোর তেমন গুরুত্ব নেই। অনেক সময় পর্যটকদের ধরাশায়ী করে মোটা অংকের ডলার হাতিয়ে নেওয়ারও নজির রয়েছে ব্যক্তি মালিকানাধীন টুরিস্ট তথ্য অফিসগুলোর। এসকল অফিসের সেবার বিনিময়ে মোটা অংকের মূল্য দেখলেই তা কিছুটা আঁচ করা যায়।
আপনার গন্তব্য স্থল বন্ধ এরকম কথা শুনলে বুঝতে হবে ওই প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ওই পর্যটন কেন্দ্র নেই। অর্থাৎ সেখানে তাদের কোনো প্রকার সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। এই সকল অফিসে মূলত গাড়িচালকেরা যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। এই চালকেরাও অধিকাংশ সময় মিডল ম্যান হিসেবে কাজ করে।
পরিত্রাণের উপায়
কোনোভাবেই শুধুমাত্র গাড়ি চালকের পরামর্শ শুনবেন না। চালক কিংবা যে কোনো ব্যক্তির পরামর্শ বিশ্বাসযোগ্য মনে হলে ক্রস চেক করুন। সব থেকে ভালো হয় কোনো স্থানে যাওয়ার আগে হোম ওয়ার্ক করে বের হন। এতে জানতে পারবেন আপনার কত খরচ হবে এবং নতুন স্থান বলে কেউ আপনার সুযোগ নিতে পারবে না।

৯. বন্ধ পর্যটনকেন্দ্র
আপনি পরিকল্পনা অনুযায়ী কোনো স্মৃতিস্তম্ভ বা পর্যটনকেন্দ্র দেখতে যাচ্ছেন। এর মধ্যেই বিভিন্ন ছোটখাটো গাড়ির চালকেরা গন্তব্য জানতে চাইবে। উপেক্ষা করলেও এই চালকেরা বলবে আজ ওই পর্যটনকেন্দ্র বা স্মৃতিস্তম্ভটি বন্ধ। এমন কথাও বলতে পারে যেখানে যাচ্ছেন সেখানে যাওয়ার জন্য আদর্শ পোশাক আপনি পরেননি।
আর এই টোপ একবার গিললেই ওই ড্রাইভার বলবে কাছাকাছিই ঘোরাঘুরির জন্য আরও ভাল জায়গা তার জানা আছে। সে আপনাকে ব্যয়বহুল স্থানে নিয়ে যাবে। এই যেমন ধরুন তার বন্ধুর বুটিকের দোকান, রেস্তোরাঁ কিংবা কোনো স্যুভিনিয়র শপে। এই সব জায়গা থেকে যাই কেনেন না কেন আপনাকে মোটা টাকা গুনতে হবে। আর এর সব কিছু থেকেই সে কমিশন পাবে।
পরিত্রাণের উপায়
আপনি নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত বিশ্বাস করবেন না যে পর্যটনকেন্দ্র বা স্মৃতিস্তম্ভটি বন্ধ। আর এই ধরনের ড্রাইভারের কোনো কথাই বিশ্বাস করা চলবে না। ইন্দোনেশিয়ার টুক টুক ড্রাইভারদের মধ্যে এই প্রবণতা অত্যন্ত বেশি। এরা যদি ২০ বাথের নিচে কোথাও নিয়ে যেতে রাজি হয় তবে হাঁটা শুরু করুন। কেননা তারা আপনাকে অনেক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার মতলব করছে।

১০. ট্যুর গাইড স্ক্যাম
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক পর্যটন কেন্দ্রেই ভুয়া টুরিস্ট গাইডদের সঙ্গে আপনার দেখা হবে। সিএম রিপ এর অ্যাংকর ওয়াট কিংবা ব্যাংককের গ্র্যান্ড প্যালেসে এই গাইডদের চোখে পড়বেই। এরা মূলত তেমন কিছুই জানে না। তারা বেশি চার্জও করবে না। তবে তারা আপনাকে যা বলবে তার অর্ধেকেই মনগড়া এবং ভুল।
পরিত্রাণের উপায়
এই ভুয়া গাইডদের এড়িয়ে চলুন। এরা যেন কোনোভাবেই টোপ ফেলতে না পারে। অফিসিয়াল গাইডেরা কখনোই কাউকে টার্গেট করে না। এদের আপনি বড় গ্রুপের সঙ্গে দেখতে পাবেন।

ফিচার ইমেজ- Reader’s Digest