এক দিন ওয়ার্ল্ড ট্যুরে বের হব। কমপক্ষে ইউরোপ ট্যুর তো দিতেই হবে। পৃথিবী ভ্রমণের আকাঙ্ক্ষা সকলেরই কম বেশি আছে। তবে উন্নত বিশ্ব ভ্রমণের আকাশচুম্বী খরচ আর সঞ্চিত অর্থের মায়া সব দিক মিলিয়ে গাছপাথরেই শখের লাগাম টেনে ধরতে হয়। শেষে অধিকাংশ মধ্যবিত্ত বাঙালির উচ্চ মূল্যের বুর্জোয়াদের দেশে যাওয়া হয় না। রবীন্দ্রনাথের সত্য কথন ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া…’ তখন সান্ত্বনার বাক্যে পরিণত হয়।
হ্যাঁ, এটা ঠিক যে পশ্চিমা বিশ্বে উচ্চ জীবনমানের সঙ্গে সঙ্গে জীবন যাপনের খরচও অনেক বেশি। তাই উন্নত বিশ্ব ভ্রমণের খরচও অনেক। আজ কম খরচে ভ্রমণের জন্য কিছু বিষয় আলোচনা করবো। এই দিকনির্দেশনাগুলো অনুসরণ করলে শুধু উন্নত পশ্চিমা বিশ্বেই নয় যে কোনো স্থানে ভ্রমণে অর্থ সাশ্রয় করতে পারবেন।
১। ফ্লাইট বুকিং
অধিকাংশের ধারণা আলাদা করে দুটি ফ্লাইট বুকিং দিলে খরচ অনেক বেশি পড়ে। কারণ রিটার্ন ফ্লাইট বুকিংয়ে তুলনামূলক কম খরচ হয়। তাই এক সঙ্গে রিটার্ন টিকেট সহ ফ্লাইট বুক দিতে হয়। অনেকাংশে এটি সত্য। তবে সব ক্ষেত্রে নয়। অনেক ক্ষেত্রেই পৃথক ফ্লাইট বুকিংয়ে খরচ কম হয়। আপনি অনলাইনে ভালো করে খুঁজে দেখলে পৃথক ফ্লাইট বুকিংয়েও সাশ্রয়ী ডিল পেতে পারেন।

২। অফ সিজনে ভ্রমণ
অল্প খরচে ভ্রমণের মৌলিক ধারণাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। আপনি কোথায় যেতে চান সেই স্থানের অফ সিজন খুঁজে বের করুন। তাই বলে বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে যেতে বলছি না। বর্ষাকালে এই অঞ্চলে প্রায় সারা দিনই বৃষ্টি হয়।
অফ সিজনে সকল ধরনের খরচ অন্য যে কোনো সময়ের থেকে প্রায় অর্ধেক কিংবা তার থেকেও বেশি কমে যায়। মানুষ জনের সমাগমও কম হয়। এছাড়া ভ্রমণ গন্তব্যের আদর্শ রূপ দেখতে পাওয়া যায়। আপনার জন্য যে আবহাওয়া স্যুট করে এমন সময়ই আপনি অফ সিজন বুঝে নির্বাচন করে ঘুরে আসুন।
৩। বুকিং ওয়েবসাইট ব্যবহার
বুকিং সাইটগুলোতে খরচ বেশি, এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আপনি সরাসরি কোনো হোটেলে গিয়ে রুম বুকিং দিলে খরচ অনেক বেশি পড়বে। বিভিন্ন বিশ্বস্ত বুকিং সাইটে অনেক বিকল্প থেকে আপনি পছন্দের রুম আর হোটেল বাছাই করতে পারবেন।
আর কিছু সময় দিয়ে বুকিং সাইটগুলোতে খুঁজলে তুলনামূলক কম খরচে রুম বুকিং দেওয়া যায়। Booking, Trivago, Agoda এরকম বুকিং সাইটগুলো থেকে পছন্দের ডিলটি খুঁজে নিন।

৪। গুগলে ডিসকাউন্ট খুঁজুন
ঘুরতে যাওয়ার আগে ওই স্থানে ভ্রমণের জন্য গুগলে ডিসকাউন্ট খুঁজুন। অনেক সময়ই নানা অফার থাকে, যা আপনার খরচ কমিয়ে দিতে পারে। যেমন ধরুন এয়ার বা বাস টিকেটে কিংবা মনুমেন্টের এন্ট্রি টিকেটে ডিসকাউন্ট ইত্যাদি।
৫। এক্সচেঞ্জ রেট জানুন
বিদেশ ভ্রমণের আগে এক্সচেঞ্জ রেট জানা খুবই জরুরী। বিদেশে মানি এক্সচেঞ্জের সময় এটি খুবই কাজে আসে। এছাড়া যে সকল দেশে মুদ্রার মূল্য ক্রমহ্রাসমান সে সকল দেশে সাময়িকভাবে অল্প খরচে ভ্রমণ করা যায়।

৬। দলের সঙ্গে ভ্রমণ করুন
এক সঙ্গে ভ্রমণে মাথাপিছু খরচ কম হয়। আপনার যদি গ্রুপ না থাকে বিভিন্ন বিশ্বাসযোগ্য ট্রাভেল এজেন্সি কিংবা গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেন। এতে খরচ তো কমবেই সেই সঙ্গে ভ্রমণের সময় দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও আপনাকে নিতে হবে না। এতে আপনি নিশ্চিন্তে ঘুরতে পারবেন।

৭। হোটেল
ভ্রমণের সময় হোটেলে থাকলে খরচ অনেক কম যায়। এর জন্য অবশ্য আপনাকে রুম শেয়ার করতে হবে। তবে অনেক বিলাসবহুল হোটেলও রয়েছে। সেগুলোতে পুল, জিমসহ অনেক আধুনিক সুবিধা পাওয়া যাবে। এতে সুবিধা হলো আপনাকে শুধু আপনার ব্যবহৃত অংশের জন্য খরচ দিতে হবে।
হোটেল ক্যালেন্ডার সম্পর্কে আগে থেকেই খোঁজ রাখুন। কেননা হোটেলগুলো থেকে অনেক সময় ফ্রি ট্যুর, কুকিং ক্লাস ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়। আর যদি চার্জও করা হয় তাও খুবই কম।
৮। স্থানীয় সিম কার্ড নিন
বিদেশে ভ্রমণের জন্য ওই দেশের সিম কার্ড নেওয়া খুবই জরুরী। অনেক সময় আপনি পথ হারাতে পারেন। আপনি তখন যদি মানুষজন ইংলিশ বোঝে না এমন স্থানে থাকেন তাহলে ঘাবড়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক।
সিম কার্ড আপনাকে শুধু হারাতেই দেবে না, আপনার অর্থও বাঁচাবে। মোবাইল ইন্টারনেটে গুগল ম্যাপ দেখে কাছাকাছি মনুমেন্টগুলোতে হেঁটেই ঘুরে আসতে পারবেন। আপনাকে শুধু শুধু ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে হবে না।

৯। এটিএম পরিহার করুন
বিদেশে এটিএম ব্যবহার করলে অনেক বেশি চার্জ কাটা হতে পারে। বিদেশের ওই বুথ আর দেশে আপনার ব্যাংকের একাউন্ট থেকে একই সঙ্গে উচ্চ মূল্যে চার্জ কাটা হতে পারে। তবে অনেক ব্যাংকে আপনাকে বিনামূল্যে বাৎসরিক চার্জের ভিত্তিতে এটিএম কার্ড দিতে পারে।
ভালো করে খোঁজ নিয়ে এটিএম কার্ড নিয়ে বিদেশে অর্থের নিরাপত্তার সঙ্গে সাশ্রয়ও করা সম্ভব। কেননা এটিএম কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটায় অনেক অফার পাওয়া যায়।
১০। বিমান বন্দরে মানি এক্সচেঞ্জ নয়
বিমান বন্দর থেকে হোটেলে যেতে যে খরচ তার সমপরিমাণ মানি এক্সচেঞ্জ করুন। কেননা এখানে এক্সচেঞ্জ রেট আপনার জন্য ভয়ংকর হতে পারে। আর যদি আপনি বড় অংকের অর্থ এক্সচেঞ্জ করেন তাহলে অনেক অর্থের বিনিময়ে আপনি অনেক কম স্থানীয় মুদ্রা পাবেন। এখানে সব কিছুর চার্জই অনেক বেশি।

১১। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করুন
পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে চেষ্টা করুন। এগুলো অনেক বেশি নিরাপদ আর এখানে আপনার কাছ থেকে বেশি অর্থ নেওয়া হবে না।

১২। রাইড শেয়ারিং অ্যাপ
বিদেশে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার অনেক সময় সাশ্রয়ী হতে পারে। তবে রাইড কনফার্ম করার আগে আপনার ডিল সম্পর্কে নিশ্চিত হোন। এখানে সুবিধা হলো গাড়িতে জিপিএস থাকার কারণে ড্রাইভার ইংরেজি না পারলেও আপনাকে ঠিকই গন্তব্যে পৌঁছে দেবে।
খুব সুন্দর লাগলো । আমি আপনাদের ভ্রমণ করতে চা।
খুব সুন্দর লাগলো । আমি আপনাদের সাথে ভ্রমণ করতে চা।