ভারতীয় চ্যানেলগুলোয় তামিল সিনেমা দেখেনি এমন মানুষ হাজারে একজন। তামিল সিনেমার অবাস্তব সব মারামারির দৃশ্য দেখে কখনো কি তামিলনাড়ুতে যাবার ইচ্ছা জেগেছে আপনার মনে? বা আপনি কি কখনো ভারতের তামিলনাড়ুতে গিয়েছেন? উত্তর যদি “হ্যাঁ” হয় তবে আপনি জানেন তামিলনাড়ু কী জিনিস। আর উত্তর যদি না হয় তবে এখন থেকেই শুরু করুন তামিলনাড়ু যাওয়ার পরিকল্পনা।
ভারতের ভ্রমণস্থানগুলোর মধ্যে তামিলনাড়ুকে রত্ন হিসেবে ধরা হয়। পবিত্র মন্দির থেকে শুরু করে বিখ্যাত সমুদ্র সৈকত, দৃষ্টিনন্দন দূর্গ, প্রকাণ্ড জলপ্রপাত- কী নেই তামিলনাড়ুতে? তার মানে তামিলনাড়ুতে যাওয়ার জন্য আপনার বাহানার অভাব পড়বে না, যেখানে সমুদ্রও আছে আবার জলপ্রপাতও বহমান সেখানে যেতে আর দেরী কিসের?
ভারতের সর্ব দক্ষিণের রাজ্য তামিল নাড়ু। সেখানে কেউ হিন্দিতে কথা বলে না, শুধু তামিল আর ইংরেজী ভাষাই চলে সেখানে। এমন অনেক কিছুই আছে সেখানে যা এখনো অনেকেরই অজানা। আমাদের আজকের আয়োজন তামিলনাড়ুর সেসব বিখ্যাত ভ্রমণস্থান নিয়ে যেখানে না গেলে তামিলনাড়ু ভ্রমণ রয়ে যাবে অসম্পূর্ণ, অতৃপ্ত। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক, কোথায় কোথায় ঘুরবেন তামিলনাড়ুতে গিয়ে।
১. চেন্নাই

শুরুটা তাহলে তামিলনাড়ুর রাজধানী দিয়েই করা যাক। চেন্নাই তামিলনাড়ু রাজ্যের সুবিশাল রাজধানী। এ এক এমন শহর যার যেদিকেই চোখ যাবে সেদিকেই পাওয়া যাবে দক্ষিণ ভারতীয় এক অনন্য অভিজ্ঞতা। ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর শিল্প এই চার স্তম্ভে চেন্নাই শহর উদ্ভাসিত এক পর্যটন শহর যার পুরোটা জুড়ে আছে মন্দির, চার্চ আর সমুদ্র সৈকত।
এখানকার “মেরিনা বিচ” সমুদ্র সৈকত পুরো ভারতবর্ষে বিখ্যাত। পন্ডি বাজারের শাড়ির মেলা আর গয়নাগাটির খেলায় মশগুল থাকে এখানকার বেশিরভাগ পর্যটক। চেন্নাই এর স্ট্রিটফুডের জন্য বেশ বিখ্যাত, এখানকার স্থানীয় খাবার-দাবারও চেখে দেখার মতো। চেন্নাই ঘুরতে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হলো নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি।
২. পন্ডিচেরি

যারা দক্ষিণ ভারত সম্পর্কে ন্যুনতম ধারণা রাখেন তারা পন্ডিচেরির নাম অবশ্যই শুনে থাকবেন। অনুসন্ধানী মন, সমুদ্রপ্রেমী আর অভিজ্ঞতা প্রেমীদের জন্য পন্ডিচেরি একটি আদর্শ স্থান। এর আরেক নাম পুডুচেরি। যদি ইতিমধ্যে গোয়া ঘুরে থাকেন তবে পন্ডিচেরি ভাল লাগবে আরো বেশি।
কারও যদি ফ্রেঞ্চ সংস্কৃতিতে একটুও আগ্রহ থেকে থাকে তবে পন্ডিচেরি তার জন্য অপেক্ষা করছে বেশ সমৃদ্ধ ফরাসী ঐতিহ্য নিয়ে। এখানকার মূল আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে অরবিন্দ আশ্রম এবং প্যারাডাইস সমুদ্র সৈকত। পন্ডিচেরি ঘুরতে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত।
৩. মুডুমালাই

তামিলনাড়ুর জীববৈচিত্র সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে যেতে হবে এখানকার সবচেয়ে বড় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র মুডুমালাই ন্যাশনাল পার্কে। বন্যপ্রাণী যেমন লিওপার্ড, বাঘ, সোনালি শেয়াল ইত্যাদির সাবলীল জীবনযাপন আর রূপবৈচিত্র দেখতে হলে তামিলনাড়ুর মুডুমালাইয়ে চলে আসতে হবে। এখানে আরও আছে “থেপ্পাকাদু এলিফ্যান্ট ক্যাম্প” যেখানে হাতির জীবনযাত্রার একদম কাছাকাছি চলে আসা যাবে। মুডুমালাই ঘুরতে আসার সবচেয়ে ভালো সময় হলো অক্টোবর থেকে মে মাস।
৪. ধানুশকডি

আপনি যদি এমন ভ্রমণকারী হয়ে থাকেন যিনি বহুদিন ধরে শহুরে জীবন থেকে একটু দূরে থাকতে চাইছেন, চাইছেন সব কোলাহল দূরে ঠেলে অবিরাম প্রশান্তির ছোঁয়া, তবে তামিল নাড়ুর ধানুশকডির সমুদ্রসৈকতগুলো আপনারই অপেক্ষা করছে। এখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত সৈকত হচ্ছে ধানুশকডি সমুদ্র সৈকত, এডাম’স সৈকত।
এখানকার আকর্ষণের মধ্যে আরো আছে “গাল্ফ অফ মান্নার মেরিন ন্যাশনাল পার্ক”। সমুদ্রের নীল জলে চোখ ভেজানোর একদম যুতসই জায়গা ধানুশকডি। এখানে আসার সবচেয়ে ভালো সময় অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি।
৫. হোগেনাক্কাল

তামিল নাড়ুর জলপ্রপাত স্বর্গ বলা হয় হোগেনাক্কালকে। তামিল নাড়ুর ধরমপুরীতে অবস্থিত ছোট্ট এই গ্রামে আছে দুর্দান্ত সব জলপ্রপাত। এখানকার মূল আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে হোগেনাক্কাল জলপ্রপাত, মেলাগিরি পর্বতমালা, পেন্নাগ্রাম আর এখানকার পবিত্র সব মন্দির সমূহ।
এক হোগেনাক্কাল জলপ্রপাত দেখার জন্যই মানুষ দেশ-বিদেশ থেকে তামিলনাড়ুর ছোট্ট এই গ্রামে আসে। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে আসলে সবচেয়ে ভালো উপভোগ করা যাবে হোগেনাক্কালের সৌন্দর্য।
৬. টুটিকরিন

তামিল নাড়ুতে এসে কেউ যদি সব কিছুর স্বাদ একবারে পেতে চায় তবে তাকে যেতে হনে টুটিকরিনে। চমৎকার সমুদ্রসৈকত থেকে শুরু করে মন্দির, গির্জা, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র সবই আছে এখানে। এখানকার কালাক্কাদ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র এখানকার বেশ বিখ্যাত পর্যটন স্থান।
মূল পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে এখানকার মন্দির আর সমুদ্র সৈকতগুলো। টুটিকরিন আসলে একটা খাবার অবশ্যই চেখে দেখা উচিত, তা হল এখানকার মিষ্টি। টুটিকরিনের সবচেয়ে ভাল মিষ্টিকে টুটিকরিন ম্যাকারনস বলা হয়ে থাকে। এখানে ঘুরতে আসার সবচেয়ে ভালো সময় নভেম্বর থেকে মার্চ।
৭. কন্যাকুমারী

তামিল নাড়ুর সবচেয়ে রঙিন শহর বলা হয় কন্যাকুমারীকে। এখানকে আসলে কেবল একটা কথাই মাথায় ঘুরবে, স্থানীয়দের থেকে মনে হয় বিদেশী বেশি। আসলেই, প্রচুর বিদেশী বিশেষ করে রাশিয়ানদের আনাগোনা বেশি দেখা যায় এখানে। কন্যাকুমারীর শিল্প, এর মন্দিরগুলোর স্থাপত্যশৈলী আর স্থানীয় খাবার-দাবার অল্প কয়েকদিনেই প্রেমে ফেলে দিবে যে কোনো পর্যটককে।
এখানকার মূল আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে কুমার আম্মান মন্দির, ভাট্টাকোট্টাই দূর্গ, সাঙ্গুথোরাই সৈকত, সোথাভিলাই সৈকত এবং বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল। সব কয়টা জায়গাই একে অপরের চেয়ে সুন্দর। এখানে ঘুরতে আসার সবচেয়ে ভালো সময় হলো অক্টোবর থেকে মার্চ মাস।
৮. রামেশ্বরাম

ভারতের সবচেয়ে পবিত্র জায়গাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে তামিলনাড়ুর এই রামেশ্বরাম। এটি মূলত একটি দ্বীপ। শ্রীলংকার খুব কাছেই অবস্থিত এই দ্বীপটি শ্রীলংকা থেকে আলাদা করা হয়েছে পাম্বান নামক এক ব্রীজ দিয়ে। যদি এখানকার মন্দির দর্শনই হয়ে থাকে আপনার একমাত্র উদ্দেশ্য তবে রামেশ্বরাম ঘুরে শান্তি পাবেন অনেক। এখানকার মূল আকর্ষণ পঞ্চমুখ হনুমান মন্দির, অগ্নিতীর্থাম এর পূজাদি। এখানে আসার সবচেয়ে উত্তম সময় অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস।
তামিলনাড়ু এক অভাবনীয় সুন্দর রাজ্য। এর প্রতি পরতে পরতে সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। আমার, আপনার সবার উচিত সৌন্দর্য সংরক্ষণ করা, পরিবেশ নোংরা না করা। তাই যেকোনো জায়গায় ঘুরতে গেলে আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে রাখুন সজাগ দৃষ্টি। ভ্রমণ হোক সুন্দর এবং প্রাঞ্জল।
ফিচার ইমেজ- cloudfront.net