গাজিপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ছাড়া দেশে তেমন ভালো মানের সাফারি পার্ক নেই বললেই চলে। আপনি যদি সাফারি ভালবাসেন, সেই সাথে রয়েল বেঙ্গল টাইগার প্রেমী হয়ে থাকেন, তবে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে গিয়ে সহজেই ঘুরে দেখতে পারেন এই চমৎকার ৫টি টাইগার সাফারি পার্ক।
৫. রান্থাম্বোর ন্যাশনাল পার্ক, রাজস্থান
বেঙ্গল টাইগারের এক বৈচিত্র্যপূর্ণ অভয়ারণ্য এই পার্ক। রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর থেকে খুব কাছেই অবস্থান করছে এটি। প্রতিনিয়তই রান্থাম্বোর ন্যাশনাল পার্কে বেড়ে চলেছে বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা। রাজস্থানের অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে এই পার্ক। ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে এর জনপ্রিয়তা।
বেঙ্গল টাইগার নিয়ে ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু রোমহর্ষক গল্পের সাথে জড়িয়ে আছে এই পার্কের নাম! অক্টোবর থেকে এপ্রিলের মধ্যে এখানে এলে একাধিক বেঙ্গল টাইগার আপনার চোখে ধরা দেবেই!
পার্কটির টাইগার ট্রেইল প্যাকেজ নিয়ে সহজেই ঢুকে যেতে পারবেন গহীন ঘন অরণ্যে। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের পায়ের ছাপ অনুসরণ করতে করতে এর দেখা পাওয়ার স্বাদ আপনাকে রোমাঞ্চিত করবে, নিঃসন্দেহে!
৪. বান্ধবগড় ন্যাশনাল পার্ক, মধ্য প্রদেশ
মধ্য প্রদেশের উত্তর-পূর্বে সাতপুরা আর বিন্দ্যা অঞ্চলের মাঝামাঝি অবস্থান করছে প্রায় একশোরও বেশি সংখ্যক বেঙ্গল টাইগারের নিরাপদ আবাসস্থল বান্ধবগড় ন্যাশনাল পার্ক। এই পার্কের বিশেষত্ব হলো বেঙ্গল টাইগারের পাশাপাশি এখানে আছে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে চিতাবাঘ আর হরিণ।
কাজেই শুধুমাত্র বেঙ্গল টাইগার দেখার আশা নিয়ে মোটেই অলস সময় পার করতে হবে না আপনাকে! আবার সাদা বর্ণের টাইগারের দেখাও পাবেন এখানে! পার্কের স্নিগ্ধ সবুজ প্রকৃতিও মনকে দেবে নিখাদ প্রশান্তি। জাবালপুর শহর থেকে খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন এখানে। রান্থাম্বোরের মতোই অক্টোবর থেকে এপ্রিল এখানে আসার আদর্শ সময়।
৩. তাদোবা আন্ধারি টাইগার রিজার্ভ, মহারাষ্ট্র
মহারাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ন্যাশনাল পার্ক এই তাদোবা আন্ধারি টাইগার রিজার্ভ। “বিধর্বের রত্ন” নামেও পার্কটিকে অভিহিত করা হয়ে থাকে। অসাধারণ বুনো সৌন্দর্যের আধার হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে তাদোবা আন্ধারিকে। অরণ্য, জলাশয় আর প্রাণী বৈচিত্র্যের নিখুঁত সমন্বয়ের দেখা পেয়ে যাবেন মহারাষ্ট্রের এই পার্কে। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যাও এখানে বেড়ে চলেছে দ্রুত গতিতে।
স্পেশাল বাস সার্ভিস আর অভিজ্ঞ গাইডের সাহায্য নিয়ে পুরো পার্ক ঘুরে দেখে মুগ্ধ হবেন আপনি। প্রকৃতিপ্রেমী হয়ে থাকলে বেঙ্গল টাইগারের পাশাপাশি এই পার্কের চোখ ধাঁধানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনি উপভোগ করবেন অবশ্যই।
মহারাষ্ট্রের নাগপুর শহর থেকে তাদোবা আন্ধারিতে আসতে হবে আপনাকে। আর বেঙ্গল টাইগারের আধিক্য উপভোগ করতে চাইলে সেপ্টেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে আসাটাই হবে সুবিধাজনক।
২. কানহা টাইগার রিজার্ভ, মধ্য প্রদেশ
মধ্য প্রদেশের আরেকটি উল্লেখযোগ্য পার্ক এটি। কানহা টাইগার রিজার্ভ পুরো ভারতেরই সবেচেয়ে বড় ন্যাশনাল পার্কগুলোর একটি। মহারাষ্ট্র আর মধ্য প্রদেশ, দুটি রাজ্য থেকেই পার্কটি বেশ কাছাকাছি। কাজেই নাগপুর বা জাবালপুর, এই দুই শহরের যে কোনোটি থেকেই আপনি চলে আসতে পারেন এখানে।
বিশেষভাবে বন্যপ্রাণী অনুরাগী হয়ে থাকলে ব্যাগপ্যাক গুছিয়ে আজই বেরিয়ে পড়তে পারেন কানহা টাইগার রিজার্ভের উদ্দেশ্যে। আপনার ভাগ্য প্রসন্ন হলে একদিনেই দেখে ফেলতে পারেন ৪ থেকে ৫টি বেঙ্গল টাইগার!
আবার দলবদ্ধ হয়ে ঘুরতে থাকা বেঙ্গল টাইগারদের দেখাও পেতে পারেন। কানহা রিজার্ভের জন্য এই পরিসংখ্যান মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়! এই পার্কের আরেকটি মজার ব্যাপার হলো বছরের যে কোনো সময় এলেই এখানে বেঙ্গল টাইগারের দেখা পেয়ে যেতে পারেন! তাই মধ্য প্রদেশ বা মহারাষ্ট্রে এলে পার্কটি না ঘুরে যাওয়া একদমই ঠিক হবে না!
১. জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক, উত্তরখান্ড
জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কই ভারতের সবচেয়ে পুরনো ন্যাশনাল পার্ক। দেশটির উল্লেখযোগ্য ন্যাশনাল পার্কগুলোর তালিকায় এই পার্কের নাম সবার ওপরে থাকে সবসময়। বিশুদ্ধ প্রকৃতি আর প্রাণীকুলের বিস্ময়কর এক মেলবন্ধন এই পার্ক। নৈনিতালের পাহাড়গুলোর মনোরম সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় পার্কটি থেকে।
উত্তরের বরফে ঢাকা পর্বত চূড়াগুলোর কোনো একটির দেখাও পেয়ে যেতে পারেন! বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যার দিক থেকে ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে উত্তরখান্ডের অবস্থান দ্বিতীয়। আর এই অবস্থান অর্জনের পেছনে নিশ্চিতভাবেই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক। এর ধিকালা ফরেস্ট লজ থেকে অধিক সংখ্যক বেঙ্গল টাইগারের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
এছাড়াও জাঙ্গাল সাফারি, বিভিন্ন ফরেস্ট জোন আর স্পেশাল ট্যুর সার্ভিসের মাধ্যমে বেঙ্গল টাইগার দেখার পাশাপাশি চোখ জুড়িয়ে নিতে পারেন পার্কটির তুলনাহীন বুনো সৌন্দর্য দেখে! সেই সাথে গহীন বনের ভেতরে তৈরি করা হয়েছে কিছু ডিলাক্স কটেজ। আপনি যদি অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় হয়ে থাকেন, তবে এই কটেজগুলোর কোনো একটিতে কমপক্ষে একবার হলেও রাত কাটানোটা আপনার জন্য বাধ্যতামূলক! অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি জিম করবেটে আসার শ্রেষ্ঠ সময়। নৈনিতাল ঘুরে দেখে সেখান থেকেই চলে আসতে পারেন এই বিখ্যাত পার্কটিতে।
ফিচার ইমেজ-Dailyhunt
তথ্যসূত্রঃ
- Dailyhunt
- Travelnetra
- Green Geo Travel
- Lonely planet
- Travel India