১৯৯০ সালের আগেও লাওস পর্যটকদের প্রবেশাধিকার দিত না। ফলে প্রাচ্যের দেশগুলোর লোকজনের জন্য তো বটেই, পশ্চিমারা বলতে গেলে দেশটির নামও শোনেনি আগে ঠিকমতো। তবে ১৯৯০ এর পর থেকে প্রচুর দর্শনার্থী আসা শুরু করে লাওসে। যদিও লাওস তার পার্শ্ববর্তী দেশ থাইল্যান্ডের মতো অত উন্নত কোনো দেশ নয়, তবুও লাওসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেই বিমোহিত হয়ে বর্তমানে প্রচুর পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র তো বটেই, পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যও লাওস ভ্রমণে পর্যটকদের উৎসাহী করে তুলেছে।
লাওসের অবকাঠামোগত উন্নয়ন থাইল্যান্ডের মতো অত বেশী না হলেও সম্প্রতি সেখানে পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা করে বেশ কিছু আবাসনের প্রকল্প তারা নিয়েছে। এর মধ্যে সৌখিন রিসোর্ট থেকে শুরু করে, কম বাজেটেই সবুজের সমারোহে থাকবার সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। আজকে লাওসের সবদিক মিলিয়ে সেরা ৫টি হোটেল এবং রিসোর্টের বিবরণ লিখছি।
সেত্থা প্যালেস হোটেল, ভিয়েনতিয়েন:
মেকঙ নদীর প্রশস্ত তীরবর্তী লাওসের রাজধানী ভিয়েনতিয়েন। এখানে কখনো খুব উঁচু বাড়িঘর ছিল না আবার জায়গাটাতেও পুরনো শহরের গন্ধ। তবে যখন থেকে লাওস পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, তখন থেকেই বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও ভিয়েনতিয়েনে বিনিয়োগ শুরু করেন। ফলে শহরটি এখন দ্রুত আধুনিকায়নের পথে ধাবিত হচ্ছে। নতুন নতুন শপিং মল এবং উঁচু দালানকোঠা নির্মাণ করা হচ্ছে।

সেত্থা প্যালেস হোটেল ১৯৩২ সালে নির্মিত একটি সুবিশাল হোটেল দালান, যার অবস্থান একেবারে ভিয়েনতিয়েনের কেন্দ্রবিন্দুতে। কলোনিয়াল পিরিয়ডের এই পুরনো দালানটি খুব যত্নের সাথে সংস্কার করে বসবাস উপযোগী করা হয়েছে। এখানকার ২৯টি রুমে পুরনো দিনের ফরাসী ফার্নিচারের সাথে আধুনিক জীবনের নানা অনুষঙ্গও রয়েছে, যেমন- মিনি বার কিংবা হোটেল-বাসীদের মালামালের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব সিন্দুক ইত্যাদি।
এছাড়াও হোটেলের বাইরেই শ্রান্তিদায়ক সুইমিং পুলের সাথে দূর দিগন্তের দিকে চোখ রেখে স্নিগ্ধ বিকেল কিংবা সন্ধ্যা কাটানোর জন্য ছবির মতো সুন্দর বাগানও রয়েছে এখানে।

এই হোটেলের ডাবল বেডের রুমগুলোর দাম শুরু হয় ২০০ ডলার/প্রতি রাত থেকে। বিস্তারিত: www.setthapalace.com
বান পাকো (লাও পাকো) ইকো লজ:
রাজধানী ভিয়েনতিয়েনের ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে বান পাকোর অবস্থান। এখানেই নাম গুম নদীর তীরে গ্রামের আবহাওয়ায় পরিপূর্ণ বান পাকো ইকো লজের অবস্থান। এই লজটি মাত্র ২২ জনের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন। তবুও আপনি যদি কোনোভাবে এখানে একটি রুমের ব্যবস্থা করতে পারেন, তাহলে প্রকৃতির কোলে শুয়ে-বসে আরামে দিন কাটিয়ে দিতে পারবেন শহুরে ঝঞ্ঝাটের কোনোরকম দুশ্চিন্তা ছাড়াই!
এখানকার বাংলোতে বসে পার্শ্ববর্তী নদীর সৌন্দর্যে বিমোহিত হওয়া কিংবা সেই নদীর ঠিক পাশেই খোলা আকাশের নিচে অবস্থিত রেস্তোরাঁয় বসে সময় কাটানো ছাড়াও এখানে রয়েছে বেশ কিছু আউটডোর এক্টিভিটিজের সুযোগ। যেমন ধরুন: সাঁতার কাটা, টিউবিং, পাখি দেখা, পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোয় হাইকিং ইত্যাদি। হোটেলটির কাছেই রয়েছে প্রাকৃতিক ঝর্ণার ঠাণ্ডা পানিতে নিজেকে শ্রান্ত করার সুযোগও।

এখানকার ডাবল বেডগুলোর দাম শুরু হয় ২৫ ডলার/প্রতি রাত থেকে। বিস্তারিত: www.banpako.net
মুয়াঙ লা রিসোর্ট, মুয়াঙ লা:

মুয়াঙ লা অঞ্চলের নাম ফক নদীর তীরে সবুজের সমারোহে অবস্থিত এই রিসোর্টটি লাওসের সবচেয়ে সৌখিন হোটেলগুলোর মধ্যে একটি। পুরো রিসোর্টটি বিশাল; রয়েছে নাগা-থিমে নির্মিত হোটেল স্যুট, কিছু রুমের প্রায় অর্ধেক অংশই কাঠের তৈরি। সবগুলো রুমই আধুনিক ফার্নিচারে সাজানো।
হোটেলের গেস্টরা নিজস্ব হট টাবে বসে নদীতীরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। এখানে যারা থাকতে আসেন, তাদের বেশীরভাগই আসেন দুই বা তিন রাতের প্যাকেজে। এই প্যাকেজে হোটেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এই অঞ্চলের আশেপাশের জায়গাগুলো ঘুরে দেখার ব্যবস্থাও থাকে।

এখানকার ডাবল বেডগুলোর দাম শুরু হয় ৩৩১ ডলার/প্রতি রাত থেকে। বিস্তারিত: www.muangla.com
রিভার রিসোর্ট, চাম্পাসাক:

কম্বোডিয়ার বাইরের খেমার মন্দিরগুলোর মধ্যে কয়েকটির অবস্থান লাওসের ভাট ফুতে। এইসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে বিমোহিত হয়ে স্মৃতির পাতায় হেঁটে বেড়ানোর জন্য পর্যটকদের পছন্দ চাম্পাসাক শহরটি, আর এই শহরের সবচেয়ে সৌখিন ও আরামদায়ক হোটেলটি হচ্ছে রিভার রিসোর্ট। মেকঙ নদীর পশ্চিম পাশের অসাধারণ ভিউ পাওয়া যায় এখান থেকে।
লাও-জাপানিজ স্টাইলে নির্মিত এখানকার ২২টি হোটেল রুম। হোটেলের ছাদে বসে মেকঙ নদীর ঢেউয়ের শব্দে আচ্ছন্ন হওয়া ছাড়াও রয়েছে নিকটবর্তী প্রাকৃতিক ঝর্ণার খোঁজ। রিসোর্টটিতে রয়েছে একজন থাই শেফের তত্ত্বাবধানে অসাধারণ এক রেস্টুরেন্ট। এছাড়াও রিসোর্টটির রয়েছে নিজস্ব স্পার সুব্যবস্থা।

এখানকার ডাবল বেডগুলোর দাম শুরু হয় ১১৯ ডলার/প্রতি রাত থেকে। বিস্তারিত: www.theriverresortlaos.com
দ্য লাস্ট রিসোর্ট, ডন ডেট:
ডন খঙ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মৌসুমি আবহাওয়ার দ্বীপ অঞ্চল ডন ডেট। এই অঞ্চলটি হালকা সবুজ রঙের ধান গাছে পরিপূর্ণ যা পর্যটকদের কাছে এই অঞ্চলটিকে করে তুলেছে ছবি তোলার স্বর্গ হিসেবে। সবুজের সমারোহে দেহ-মনকে শান্ত করতে, বছর বছর এই অঞ্চলে দর্শনার্থীদের সংখ্যাও বাড়ছে। সেইসব পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে বহু আধুনিক ক্যাফের ব্যবস্থাও করা হয়েছে এই অঞ্চলে। কিন্তু তবুও প্রাচীন লাওসের পুরনো দিনের মাটির গন্ধ এখনো মুছে যায়নি এখান থেকে।
দ্বীপটির পশ্চিম দিকে, শহর থেকে মাত্র ৭৫০ মিটার দূরে অবস্থান এই ‘দ্য লাস্ট রিসোর্ট’ এর। এটি মূলত একটি তাঁবু আকৃতির কুঁড়ে ঘরের রিসোর্ট। যুক্তরাজ্যের একজন সাবেক ব্যাংকার নিজ উদ্যোগে পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য ছোট পরিসরে কম খরচের এই রিসোর্টটি নির্মাণ করেন।

এখানকার ছোট ছোট কুঁড়েঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে গাছপালার ছায়াঘেরা অঞ্চলে। সবার জন্য রয়েছে কমন বাথরুম, সৌখিনতার কোনো জায়গা নেই বলতে গেলে এখানে। বরং এখানে যারা থাকতে আসেন, প্রকৃতির সন্তান হিসেবে সকলে মিলে বসে আড্ডা দেন রিসোর্টের মাঝে থাকা বাগানের মধ্যে বসে, ক্যাম্পফায়ারের ব্যবস্থা করে। এছাড়া সবাই একত্রে বসে গণ-আহারের পর প্রকৃতির বুকেই গা এলিয়ে দিয়ে উপভোগ করেন উন্মুক্ত সিনেমা। নিঃসন্দেহে এ এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা!
এখানকার ডাবল বেডগুলোর দাম শুরু হয় ৮ ডলার/প্রতি রাত থেকে। বিস্তারিত: www.facebook.com/lastresortdondet.
সবুজে পরিপূর্ণ এই লাওস যেন শান্তিময় পৃথিবীর বার্তাবাহক হয়ে ডাকে পৃথিবীর মানুষজনকে। সে ডাকে সাড়া দিয়ে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন এই শান্তির দেশের হাজার হাজার হাতি দেখে, ঝর্ণার গান শুনে, নদীর কলতান শুনে কিংবা হোটেল/রিসোর্টে বসে প্রাচীন লাওসের অনুসন্ধান করে। ভ্রমণ শুভ হোক!
ফিচার ইমেজ: adventureinyou.com
How to get laos visa from bangladesh?
https://www.visathing.com/country/laos/