আমেরিকার পূর্ব উপকূলে ক্যারিবীয় শান্ত সাফারি এলাকা থেকে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার অঞ্চলে যেখানেই যান না কেন এই জায়গাগুলো ব্যাগ প্যাকিংয়ের জন্য সৃষ্টি করেছে অপূর্ব সব সুযোগ-সুবিধা। প্রতিটি জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন অ্যাক্টিভিটি সমৃদ্ধ জায়গাও রয়েছে। আপনি নিকারাগুয়ার বাষ্পীভূত অগ্নিগিরির নিচে থেকে কোস্টারিকার মেঘের সন্ধান করতে পারেন।

Source: The Economist
গুয়াতেমালার প্রাচীন মায়া সম্বলিত সূর্যোদয় দেখতে পারেন, অথবা নিকারাগুয়ার জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হাঁটতে পারেন। আসলে আমেরিকায় ব্যাংকিংয়ের জায়গার অভাব পাবেন না কোথাও। শুধু দরকার উপযুক্ত পরিকল্পনা এবং সাহস। এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের ব্যাকপ্যাকিং সম্পর্কে ধারণা পাবার জন্য এই টিপসগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
কোন দেশটি ঘুরবেন সেটি সতর্কতার সাথে নির্বাচন করুন
পর পর যদি বেশ কয়েকটি দেশে ঘোরার মতো হাতে সময় থাকে সেক্ষেত্রে আপনি একটি রুট প্লান করে নিয়ে এগোবেন। যেমন একটি দেশ থেকে আরেকটি দেশে যাবার সময় যেন আপনার সময় এবং রাস্তা দুটি স্বল্প থাকে। এছাড়া দেখে নেবেন সেই দেশগুলোর রাজনৈতিক পরিস্থিতি কীরকম, কারণ অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভ্রমণ করা বোকামি হতে পারে।

Source: Life Before Work Blog
এগুলো বাদেও খরচের ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে। যেমন কোস্টারিকা এবং পানামা যথাযথভাবে সস্তা পরিকল্পনায় ভ্রমণ করা গেলেও গুয়াতেমালা, নিকারাগুয়া, সালভাদর, হন্ডুরাস এই অঞ্চলগুলোতে ব্যাকপ্যাকিং রীতিমতো ব্যয়বহুল। তাই আপনার বাজেট এবং পরিকল্পনা সমন্বয় করে তারপর দেশ নির্বাচন করুন।
কোথায় থাকবেন তার বিকল্প পরিকল্পনা করুন
আমেরিকার এই দেশগুলোতে হোটেল এবং হোমস্টের অভাব নেই। কিন্তু আপনি যদি কোনো কারণে হোটেলের বা হোমস্টের বাইরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সময় ব্যয় করেন, তবে মনে রাখবেন মধ্য আমেরিকার বেশিরভাগ গন্তব্য স্থলগুলো ফ্লাশ পেপারস্টাইল হোটেলের প্রবণতার জন্য এখন আর পুঁজিবাজারে নেই। তাই সবার আগে থাকার বিকল্প জায়গার পরিকল্পনাটিও করে নেবেন।

Source: Life Before Work Blog
যেমন হোটেল বুকিংয়ের পাশাপাশি যদি গিয়ে দেখেন হোটেলে জায়গা হচ্ছে না তাহলে কোথায় স্বাভাবিকভাবে থাকবেন সেই পরিকল্পনাটি করে নেয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে বলে আমার মনে হয়। এছাড়া বিলাসিতা বর্জন করে যদি একটি রাত কাটানোর মতো ছোট একটি ঘরে একটি বিছানায় শুতে হয় তবে সেটি গ্রহণ করাই যথাযথ হবে বলে আমার ধারণা।
স্থানীয় উৎপাদিত পণ্য সম্পর্কে জ্ঞান রাখুন
আপনি শুনে অবাক হবেন যে, মধ্য আমেরিকার এই অঞ্চলগুলোতে চকলেট, রাম, কফি, পনির এগুলো প্রচুর পরিমাণ উৎপাদিত হয়। আপনি কেবল আমেরিকান বিশুদ্ধ মাটির পুষ্টি সম্বলিত এই উপাদানগুলো উৎপাদন দেখেও অবাক হবেন। সব থেকে ভালো হয় আপনি যদি এই উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর মূল উৎসগুলোতে যেতে পারেন।

Source: Let’s Talk
আশেপাশের স্থানীয় কফি শপগুলোতে গুয়াতেমালার উৎপাদিত বিখ্যাত কিছু কফি এবং চকলেট পেয়ে যাবেন। যেগুলো খুব সস্তায় কিনে ফেলতে পারবেন অথবা কারো জন্য গিফট হিসেবেও নিয়ে যেতে পারবেন। এছাড়া স্থানীয় কিছু উদ্যোক্তার উদ্যোগে এবং কফি চাষের বিশাল বিশাল রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। ইচ্ছা করলে সে জায়গাগুলোতে ঘুরে আসতে পারেন এবং বিনামূল্যে উপভোগ করে আসতে পারেন স্থানীয় এই খাবারগুলো।
সতর্ক এবং নিরাপদে থাকুন
এখনো সেন্ট্রাল এলাকার একটি বিশাল পরিমাণ মানুষ বেআইনি কোকেন এবং স্মাগ্লিংয়ের গল্প শুনতে শুনতে বিশ্বাসী হয়ে আছে। ৮০ এর দশকে অনেক বিপ্লব ও গৃহযুদ্ধের কারণে এই অঞ্চলে স্মাগলিংয়ের কতটা অবনতি হয়েছে তা শুধুমাত্র তারাই জানেন। যাই হোক বিশেষ কিছু শহর যেমন হন্ডুরাস, সান পেড্রোসুলা এবং এল সালভাদর, সান সালভাদর তখন এতটা উন্নত অবস্থায় ছিল না। তাই এই অঞ্চলগুলো সেন্ট্রাল আমেরিকার সব থেকে বিপজ্জনক অবস্থার মধ্যে রয়ে গিয়েছে। গুয়েতেমালা, এল সালভাদর এবং হন্ডুরাসকে যদি ত্রিভুজাকার চিহ্নিত করা যায় তবে এর মাঝের অঞ্চলটি সব থেকে বিপজ্জনক এলাকা হবে ভ্রমণার্থীদের জন্য।

Source: dLife
তাই এই অঞ্চলগুলোতে সাবধানে চলাফেরা করার চেষ্টা করতে হবে। শুধুমাত্র নিবন্ধিত ট্যাক্সি গ্রহণ করুন, হোটেল নেবার সময় যাচাই করে নিন এবং স্থানীয়দের পরামর্শ মতো চলুন। এ অঞ্চলে থাকাকালীন সময়ে রাতের বেলা খুব বেশি একা ঘরে ঠিক হবে না। মূল্যবান জিনিসপত্রগুলো নিজ দায়িত্বে সংরক্ষণ করে রাখবেন এতে করে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেও অতিরিক্ত মাত্রার ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
বর্ডার চেকিংয়ের জন্য প্রস্তুত থাকুন
পৃথিবীর যেকোনো ব্যাকপ্যাকারের সাথে কথা বলুন না কেন তারা সব সময় একটি মজাদার ঘটনা বলে থাকবেন চেক পয়েন্টগুলো নিয়ে। বিশেষ করে ইমিগ্রেশনের চেক পয়েন্টগুলো যদি উড়ে যাওয়া যেত তাহলে হয়তো এই জায়গাগুলোর অতিরিক্ত ঝামেলা সহ্য করতে হতো না। এছাড়া মধ্য আমেরিকার এই চেক পয়েন্টগুলো অতিরিক্ত ঝামেলাপূর্ণ অর্থাৎ প্রতিটি চেক পয়েন্টে আপনাকে পার হতে হবে লম্বা লাইনের সমুদ্র এবং শত শত এনকোয়ারি।

Source: The Economist
তবে মনে রাখতে হবে আপনার নিরাপত্তার জন্যই প্রতিটি দেশ এই চেক পয়েন্টগুলো স্থাপন করে। কোনো অবৈধ পণ্য বহন করবেন না। চেক পয়েন্টগুলোতে ঢোকার পূর্বে নিজের ব্যাগ ভালোভাবে চেক করে নেবেন যাতে কোনো প্রতারক চক্র দ্বারা আপনি প্রতারিত হয়েছেন কিনা সেটা আগে থেকেই বোঝা যায়।
বিভিন্ন দেশের মুদ্রা যদি আলাদা হয়ে থাকে তবে সেই মুদ্রা এক্সচেঞ্জের ব্যাপারেও খেয়াল রাখবেন। সর্বোপরি ইমিগ্রেশন অফিসারকে যতটুকু পারা যায় সাহায্য করার চেষ্টা করবেন। এতে করে লম্বা লাইনটিতে কিছুটা হলেও কম সময়ে পার হতে পারবে।
বেশি দূরত্বে যাত্রাটি বাই এয়ার করার চেষ্টা করুন
সাধারণভাবে উত্তর আমেরিকা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত দূরত্ব খুব কম মনে হলেও এই বোকামি করবেন না। কারণ এত বিশাল একটি জায়গা আপনাকে ঘুরে যেতে হবে যা বিস্ময়করভাবে আপনার পুরো ছুটির সময়টি শেষ করে দিতে পারে। সাধারণত সস্তা লোকাল বাসগুলো প্রতিটি জায়গায় থামতে থামতে এত বেশি পরিমাণ সময় নিয়ে ফেলে এতে আপনার মূল্যবান সময়ের অপচয় ছাড়া অন্য কোনো লাভ হবে না।

Source: therahnuma
তাই যদি উত্তর আমেরিকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকার অঞ্চলগুলো ভ্রমণ করতে চান সে ক্ষেত্রে চেষ্টা করুন বাই এয়ার অতিরিক্ত দূরত্বগুলো কাভার করে ফেলার। সাধারণত অন্তর্দেশীয় ফ্লাইটগুলোর খরচ সব সময় প্রায় একই রকমই হয়ে থাকে। তারপরও যদি কয়েক মাস আগে টিকিট কেটে রাখতে পারেন সেক্ষেত্রে হয়তো এই খরচটা কিছুটা কমে যাবে। আর আপনি যদি ব্যাকপ্যাকিং ট্রাভেলার হয়ে থাকেন তবে, অবশ্যই আপনি আপনার পরিকল্পনা মোতাবেকই এগোবেন। অল্প পরিমাণ অর্থ বাঁচাতে গিয়ে বৃহৎ সময় ব্যয় করার কোনো মানে নেই।
রাজধানী এবং বড় শহরগুলো এড়িয়ে চলুন
ভ্রমণের জন্য আপনার সময় যদি খুব কম হয়ে থাকে তবে, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন বড় শহরগুলো এড়িয়ে চলতে। যদিও আপনার সারাদিনের যাত্রা শেষ ডেস্টিনেশন হিসেবে বড় শহরগুলো রাখতে হবে। যদি যাত্রার মাঝামাঝি জায়গাগুলোতে কোনো বড় শহর পড়ে তাহলে শহরের কোনো বাইপাস ব্যবহার করে শহরকে এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম।
কারণ শহরের মধ্যে ঢোকার পর আপনাকে সম্মুখীন হতে হবে দীর্ঘ জ্যাম, অতিরিক্ত খরচ এবং ঝামেলাপূর্ণ পরিবেশের। তাই নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রধান শহরগুলো এড়িয়ে চললে কম সময়ে আপনি আপনার নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।
Pingback:সেন্ট্রাল আমেরিকায় ব্যাকপ্যাকিং টিপস - Neo Travel