ফুল, কে না ভালোবাসে? নিজের জন্য কিংবা প্রিয় মানুষদের জন্য ফুলই যেন সবচেয়ে সহজ ও গ্রহণযোগ্য উপহার। সারা পৃথিবী জুড়ে রয়েছে হাজারেরও অধিক ফুল। এসব ফুল আকার, আকৃতি, গন্ধ, রং সবদিক থেকে আলাদা একে অন্যের থেকে। আমাদের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যক মানুষ পাওয়া যাবে যারা আসলে ফুল ভালোবাসে না। কেউ কেউ কিছু ফুল ভালোবাসেন রংয়ের কারণে, কিছু ভালোবাসেন গন্ধে মুগ্ধ হয়ে। পৃথিবী জুড়ে রয়েছে অসংখ্য ফুলের বাগান। সেসব বাগানে চাষ হয় নানা রকম ফুলের।

ফুল ভালোবাসা মানুষেরা ভালোবাসেন বসন্তকালকে। তার কারণটা বোঝা খুবই সহজ। বসন্তকালে মূলত অধিকাংশ ফুল ফুটে থাকে। সে সময় নানা রঙের ফুল, ফুলের গন্ধে ছেঁয়ে যায় চারপাশ। এমন অসংখ্য ভ্রমণ পিপাসু মানুষ রয়েছেন যারা বিশেষ করে বসন্তকালে বিশ্বের বেশ কিছু দেশের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়েন, শুধুমাত্র ফুলের প্রতি ভালোবাসায়।চলুন জেনে নেয়া যাক বিশ্বের সেরা কয়েকটি বাগান সম্পর্কে, যে বাগানগুলো ফুলপ্রেমীদের জন্য হতে পারে পরবর্তী ভ্রমণ গন্তব্য।
১. কুকেনহফ, নেদারল্যান্ড

নেদারল্যান্ডের কুকেনহফ, এটি যেন বিশাল এক টিউলিপের রাজ্য। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ ফুল বাগান। শুধুমাত্র ফুলকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে এমন বিশাল এক পর্যটক বাণিজ্য তা জায়গাটিতে না গেলে বোঝা সম্ভব না আসলে। কুকেনহফ একটি স্বর্গের নাম।
পুরো ইউরোপ জুড়ে ফুল রপ্তানি হয় এই বাগানটি থেকে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্প্রিং গার্ডেন এটি। প্রতি বছর ২০ মার্চ থেকে ১৭ মে পর্যন্ত এই ফুলের রাজ্য খোলা রাখা হয় পর্যটকদের জন্য। বাকিটা সময় ধরে চলে বাগান পরিচর্যা আর টিউলিপ ফুল সাজানোর কাজ।
প্রতি বছর সারা পৃথিবীর পর্যটকরা আসেন এই ফুলের রাজ্যে হারাতে। বড় বড় গাছ আর গালিচার মতো সবুজ ঘাসের ভেতর বাহারি রঙের টিউলিপ দেখে মন ও চোখ জুড়িয়ে যায় সবারই। এ বাগানটি ভ্রমণে আসা পর্যটকদের জন্য রাখা আছে নানা ব্যবস্থা। ভেতরে একটি ক্যানেল ও কৃত্রিম জলপ্রপাত তৈরি করা আছে। সে জলপ্রপাত বয়ে সারাদিন সর্পিল গতিতে চলে পানির ধারা।
২. গার্ডেন অব ভার্সাইলস, ফ্রান্স

‘দ্য চাতেউ ডি ভার্সাইলস’ বা ‘গার্ডেন অব ভার্সাইলস’ মূলত ফরাসি রাজাদের বাড়ি। এই বাড়ি বা প্রাসাদটি রাজা ষষ্ঠ লুই তৈরি করেছিলেন এবং তৈরির সময় বাড়িটিতে তিনি যুক্ত করিয়েছিলেন এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একটি বাগানের সাথে। পরবর্তীতে বাগানটিকে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো হয়। এখন বাগানটিকে আলাদা করে প্রাসাদের অংশ বলার অপেক্ষা রাখে না, কারণ বৃহদাকার এই বাগানটি নিজেই আসলে একটি প্রাসাদের মতো সুন্দর।
অসাধারণ এই বাগানটির কাজ সম্পূর্ণ করতে সময় লেগেছিল পুরো ৪০টি বছর। বর্তমানে বাগানটি সারা বছরই খোলা থাকে পর্যটকদের ভ্রমণের সুবিধার্থে। তবে বাগানের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য দেখার সুযোগ পাবেন বসন্তকালেই, যখন ফুলে ফুলে ছেঁয়ে স্বর্গীয় হয়ে ওঠে চারপাশ।
৩. দুবাই মিরাকল গার্ডেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ও বড় বাগান হিসেবে গিনেস বুকে নাম রয়েছে এই দুবাই মিরাকল গার্ডেনের। এই বাগানটির আয়তন ৭২ হাজার বর্গমিটার। ফুলের স্বর্গরাজ্য খ্যাত দুবাইয়ের মিরাকল বাগানটি পৃথিবীর সবচেয়ে অবাক করা একটি বাগান। এই বাগানটির অবস্থান দুবাইয়ের শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ সড়কের পাশে। প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ফুল রয়েছে এই বাগানটিতে।
সবচেয়ে মজার বিষয়টি হলো এই বাগানের ফুলগাছগুলো বিভিন্ন আকৃতিতে সাজানো। যেমন ময়ূর, পাখি, গাড়ি, ঈগল, পিরামিড, ছাতা, তারার আকৃতি, বল, হার্টের আকৃতি, ফুলের দেয়াল, ফুলের গেট ইত্যাদি। বিশাল এই বাগান এলাকায় রয়েছে উন্মুক্ত পার্কিং ব্যবস্থা, বিশেষ পার্কিং ব্যবস্থা, বসার জায়গা, ধর্মীয় প্রার্থনার জন্য আলাদা জায়গা, শৌচাগার ও হেলিকপ্টার ল্যান্ডিংয়ের জায়গা মিলিয়ে আরো অনেক অনেক সুবিধা।
৪. সিনজুকু গোয়েন জাতীয় উদ্যান, জাপান

ব্যস্ত টোকিওর মাঝখানে এবং সিনজুকু স্টেশন থেকে মাত্র একটি ছোট হাঁটার পথ পেরিয়ে গেলেই চোখে পড়বে ‘সিনজুকু গোয়েন’ নামক একটি শান্তিপূর্ণ জাতীয় উদ্যান। এই উদ্যানটি বিভিন্ন ধরনের চেরি গাছে পূর্ণ। বসন্ত (যে সময় চেরির ফুল ফোটে) ঋতুর সময় পরিদর্শন করার জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান। স্থানীয় লোকেদের কাছে এবং পর্যটকদের জন্য এটি একটি জনপ্রিয় বাগান।
এই বাগানটি মার্চ মাসের শেষ দিকে বা এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে সঞ্চালিত হয়। তবে চেরি গাছের ফুল ফোটার সঠিক সময় সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা খুব কঠিন। তবে যেকোনো ঋতুতে বন্ধুদের নিয়ে এই এলাকায় গাছ ও ফুলের ভিড়ে ছোট্ট একটি বনভোজনের আয়োজন করে ফেলতে পারলে নিজেদের ভাগ্যবানই লাগবে আপনাদের। চমৎকার গোলাপী এবং সাদা ফুলের ভিড়ে সময়টুকু বেশ রঙিন কাটবে।
৫. ইভারল্যান্ড রিসোর্ট, দক্ষিণ কোরিয়া

এই সুন্দর থিম পার্কটি দক্ষিণ কোরিয়ার জিয়োনজি প্রদেশে অবস্থিত। মূলত এই বাগানটি একটি চার ঋতু বিশিষ্ট বাগান। বিভিন্ন ঋতুতে এ বাগানটিতে বিভিন্ন ফুলের দেখা পাওয়া যায়। এটি এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত টিউলিপ, জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত লিলিস এবং সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ক্রিসেন্টহামস ফুলে ভরে থাকে।
বসন্তকালে এ বাগানটিতে বেশ জাঁকজমকভাবে বসন্ত উৎসব পালন করা হয়। সে সময় এই বাগানটিতে গেলে মুগ্ধতায় ভরে যাবে মন। রাতের বেলায় এ বাগানে রঙিন আলোর ব্যবহার জায়গাটিকে আরো অনেক বেশি সুন্দর করে তোলে।
৬. বুটচার্ট গার্ডেন, কানাডা

কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যের মনোরম এক দ্বীপশহর ভ্যানকোভার। এই দ্বীপেই ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রকৃতি প্রেমীদের আকৃষ্ট করে চলেছে বুটচার্ট গার্ডেন। বর্তমানে বাগানটির একটি অংশে রয়েছে শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা। ৩০ ধরনের জীবজন্তু নিয়ে অন্যদিকে গড়ে তোলা হয়েছে একটি চিড়িয়াখানা।
বাগানের অন্যতম আকর্ষণ মনোমুগ্ধকর বেশ কিছু ঝর্ণা। আর গোলাপ প্রেমীদের জন্য রয়েছে নানা জাতের গোলাপের রঙিন জগৎ। অন্যদিকে ব্রোঞ্জসহ নানা প্রকার মূল্যবান ধাতু এবং অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে বাগানটিতে গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি ভাস্কর্য। বাগানটি কানাডার ঐতিহ্যের একটি অংশ হয়ে আছে। তাই কানাডা সরকার বাগানটিকে জাতীয় ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ফিচার ইমেজ- wpnuture.com