খালগুলো বিভিন্ন আকৃতির ও বিভিন্ন মাপের হয়ে থাকে। কোথাও সরু, কোথাও চওড়া আবার কোথাওবা অনেক বড়। খালগুলো প্রায়শই নগরগুলোর মধ্য দিয়ে জলপথে গিয়ে মিশেছে উপসাগরগুলোর সঙ্গে। বিশ্বে এমন অসংখ্য খাল রয়েছে যেসব খালের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।
বিখ্যাত বহু শহরের উপর দিয়ে অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে বয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক সেসব খালেরও অবশ্য কিছুটা কৃতিত্ব রয়েছে শহরগুলোর বিখ্যাত হয়ে ওঠার পেছনে। শহরগুলো পর্যটকদের প্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে। খালের জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠা শহরগুলোকে অনেকেই ‘ভ্যানিস অফ’ শব্দ দুটি যুক্ত করে ডাকতে ভালোবাসেন। কারণ পানিপূর্ণ ভেনিসের সৌন্দর্য সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। ‘ভ্যানিস অফ’ শব্দ দুটি যোগ করে বোঝানো হয় খালের সৌন্দর্য আসলেই কতটা বেশি সে শহরগুলোর!
চলুন জেনে নেয়া যাক, বিশ্বের কয়েকটি সুন্দর খালের সংক্ষিপ্ত বিবরণ।
১. স্টকহোম খাল, সুইডেন:
‘ভেনিস অফ দ্য নর্থ’ বা নর্থের ভেনিস নামে পরিচিত, সুইডেনের স্টকহোমের ১৪টি দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত এই স্টকহোম খাল। যেহেতু এটি অনেক দ্বীপ জুড়ে ছড়িয়ে আছে তাই এখানকার সব এলাকাতেই নৌকার ব্যবস্থা রয়েছে। নৌকাই মূলত পারাপারে সহায়তা করে। তাছাড়া ভ্রমণ প্রিয় পর্যটকদের এই খালের সৌন্দর্য দেখানোর জন্যও নৌকা রয়েছে।
খালটি ঘুরে দেখার জন্য একটি দুর্দান্ত উপায় হলো, একটি সরু নৌকা বা কায়াক ভাড়া করা এবং শহুরে দ্বীপগুলোর মধ্যে ঘণ্টা খানেক ঘুরে ব্যয় করা।
২. আলপ্পুজহ, ভারত:
আরেকটি ‘ইস্টের ভেনিস’ খ্যাত স্থান। আলাপুজা বা আলপ্পুজহ (এছাড়াও অ্যালপ্পে নামেও পরিচিত) ভারতের একটি প্রাচীন ও সুন্দর স্থান, যে স্থানটি মূলত অসংখ্য খালে পূর্ণ। আলপ্পুজহ বিখ্যাত কেরালা ব্যাকওয়াটারগুলোর সাথে সংযুক্ত। কেরালার মতো এই জায়গাটিও বেশ বিখ্যাত।
এ স্থানে পর্যটকরা ও স্থানীয় দর্শকরা একদিন বা কয়েক দিনের জন্য এখানকার বিভিন্ন হাউস ভাড়া নিতে পারেন। এ স্থানে বিখ্যাত স্নেক বোট রেস আয়োজিত হয়ে থাকে, যেখানে নেহরু ট্রফির জন্য প্রতিযোগিতা হয় এবং চাইলে প্রতিযোগী দলগুলোর সঙ্গে আপনিও অংশগ্রহণ করতে পারেন।
৩. ব্যাংকক লঙ্গস, ব্যাংকক:
‘লঙ্গস’ থাই-এর জন্য খাল হয় বহু আগে। ঐতিহাসিকভাবে এটিকে থাইল্যান্ডের মানুষ ব্যবহার করতো পরিবহন ও বাণিজ্যিক কাজের জন্য। এই খালটিই ব্যাংকককে ‘ইস্টের ভ্যানিস’ উপাধি অর্জন করিয়েছে। যদিও বর্তমানে, রাস্তার জন্য অনেক খাল ভরাট হয়ে গেছে, তবে তার বেশ কিছু এখনো রয়েছে। এবং এ খালগুলোর জনপ্রিয়তা একেবারেই কম নয়।
সারা বছর অসংখ্য পর্যটক আসেন এই খালগুলোর সৌন্দর্য অবলোকন করতে। আপনি শুধুমাত্র এর সৌন্দর্য অবলোকন করতে কিংবা ব্যাংককের ট্রাফিক এড়িয়ে শান্তিতে কিছু পথ যেতে চাইলে এই খালের পথে যেতে পারেন।
৪. নান মাদল, মাইক্রোনেশিয়া:
নান মাদল ‘প্যাসিফিকের ভেনিস’ খ্যাত একটি স্থান। এটি মাইক্রোনেশিয়ার পোহ্নেপী দ্বীপের পূর্ব তীরে অবস্থিত। মনুষ্যসৃষ্ট দ্বীপগুলোর ছোট একটি সংগ্রহ এটি। এখানকার দ্বীপগুলোর নির্মাণ আনুমানিক ৮ম শতাব্দীর শুরুর দিকে।
তবে নান মাদলের বিখ্যাত মেগালিথিক স্থাপত্যগুলো সম্ভবত ১২ কিংবা ১৩ শতকের মধ্যকার সময়ে নির্মিত হয়েছিল। ৪০০ বছরেরও বেশি সময় পর্যন্ত শহরটি সাওদেলুর রাজবংশের আনুষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক আসন হিসেবে কাজ করতো। এ জায়গাটি জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য সুন্দর খাল পর্যটকদের এই জায়গাটির প্রতি আকৃষ্ট করে থাকে।
৫. সুজোউ খাল, চীন:
প্রায়শই ‘চীনের ভেনিস’ বলা হয় সুজোউ খালকে। পূর্ব চীনে অবস্থিত সুজোউ খালটি। ৫ম শতকের দিকে এই খালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে খালটির অসাধারণ সৌন্দর্যের জন্য খালটি সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠতে থাকে। বিশেষ করে খালটি জনপ্রিয় তার কমনীয় জলপথের জন্য।
এই খালটি বেশ কিছু জটিল বাগান ও ঐতিহাসিক পাথর সেতুতে ঘেরা, যা এই খালটির সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করেছে। সিল্কের বাণিজ্য এবং গ্র্যান্ড ক্যানালের কাছাকাছি থাকার কারণে এই সুজোউ খালটিও বিশ্বের বিখ্যাত জলপথ বাণিজ্য পথগুলোর মধ্যে একটি।
৬. পানামা খাল:
জাহাজ চলাচলের জন্য পানামা প্রজাতন্ত্রের ইস্থমাসে নির্মিত একটি খাল পানামা। যা আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে যুক্ত করেছে। ইস্থমাস বলতে দুটো বড় ভূখণ্ডকে সংযোগকারী সরু ভূমিকে বোঝায় যার অন্য দুই পাশে সাধারণত পানি থাকে। পানামার ইস্থমাস উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশকে যুক্ত করে এবং আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে আলাদা করে রাখে।
এই খালটি তাই এক অর্থে মহাদেশ দুটিকে আলাদা করে মহাসাগর দুটিকে যুক্ত করেছে। পানামা খাল না থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব থেকে পশ্চিম উপকূল অভিমুখে যাত্রাকারী যেকোনো জাহাজকে দক্ষিণ আমেরিকার কেইপ হর্ন হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে অতিরিক্ত ১৫ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হতো।
৭. আমস্টারডামের খাল:
আমস্টারডাম শহরটিকেও বলা হয় ‘উত্তরের ভেনিস’৷ এই শহরে প্রায় ১০০ কিলোমিটার খাল রয়েছে, ওলন্দাজ ভাষায় যাকে বলা হয় ‘গ্রাখটেন’৷ এগুলো তৈরি হয়েছিল সপ্তদশ শতাব্দীতে, প্রধানত মালপত্র বহনের জন্য৷ পুরো শহরে রয়েছে ১৬৫টি খাল পথ। তাই আমস্টারডামকে ভাসমান শহর বলা যেতেই পারে।
তাছাড়া ৯০টি ছোট-বড় দ্বীপ রয়েছে শহরে। আর এগুলো পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়েছে এক হাজার ২৮১টি সেতুর মাধ্যমে। খালগুলো ঘুরতে চাইলে রয়েছে নৌকার ব্যবস্থা। আপনি চাইলেই একটি প্যাডেল বোট বা ক্রুজ ভাড়া করে নিয়ে নিতে পারেন, তাহলে আর আমস্টারডাম ঘুরতে পায়ে হাঁটার বা ট্রেন ধরার দরকার পড়বে না। মাত্র ১৫ ইউরোতে ঘোরার জন্য পাবেন প্যাডেল বোট। মূলত আমস্টারডামের খালগুলোই এখানকার বড় পর্যটন আকর্ষণ।
ফিচার ইমেজ- www.touropia.com