ভারতের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য তিনটি জায়গা সিকিম, অরুণাচল ও লাদাখ। এতদিন পর্যন্ত এ তিনটি জায়গায় বাংলাদেশিদের জন্য যাওয়া খুব কঠিন ছিল। আসলে সীমাবদ্ধ ও সংরক্ষিত এলাকা হওয়াতে এ তিনটি জায়গায় যেতে ভারতীয় নাগরিকদেরও বিশেষ অনুমতি নিতে হতো যাকে বলা হয় ইনার লাইন পারমিট (আইএলপি)। আর বিদেশিদের জন্য দরকার হয় রেস্ট্রিকটেড এরিয়া পারমিট (আরএপি)।
এই র্যাপ যোগাড় করার পদ্ধতি ছিল বেশ জটিল ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আর সব প্রক্রিয়া শেষ করে শেষ পর্যন্ত অনুমতি মিলতোও খুব কম। প্রথমে ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদনপত্র পাঠাতে হতো দিল্লীতে। সেখান থেকে অনুমতি মিললে সেটা নিয়ে স্থানীয়ভাবে আবার অনুমতি নিতে হতো।
দিল্লী থেকে অনুমতি নিতেই সময় লাগত অন্ততপক্ষে আট সপ্তাহ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই আবেদন পত্র পাঠানোর পর আর কোনো খোঁজ খবর মিলত না। অবশ্য লাদাখে কিছুদিন এ নিয়ম শিথিল থাকায় অনেক বাংলাদেশিই এ জায়গাটি দেখার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন। এ বছরের শুরু থেকে আবার কড়াকাড়ি আরোপ করার কারণে আগের মতোই দীর্ঘ আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়ে যায় লাদাখ ভ্রমণ।

তবে এবার ভারতীয় হাইকমিশন এ তিনটি সংরক্ষিত এলাকা ভ্রমণে অনেক বেশ নমনীয় অবস্থানে এসেছে। একমাত্র পাকিস্তান ও চীনের নাগরিক ব্যতীত বাকি সকল দেশের নাগরিকদের জন্য ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রেই রাখা হচ্ছে আলাদা কাউন্টার। আইভিএসির ওয়েবসাইট থেকে ফরম ডাউনলোড করে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করলেই সহজেই পাওয়া যাবে এ অনুমতি।
যদিও সময় লাগার ব্যাপারটা থেকেই যাচ্ছে। তবে বিষয়টা অনেক সহজ হয়েছে। আইভিএসির ওয়েবসাইটের এই লিংক থেকে ফরম পাওয়া যাবে সীমাবদ্ধ ও সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের অনুমতির আবেদন। আইভিএসি সে ফরম গ্রহণ করে দিল্লীতে পাঠাবে। মোটামুটি দুসপ্তাহের মধ্যেই আবেদনের ফলাফল জানা যাবে।
এই তিন জায়গার অনুমতি পাওয়া যাবে শুনেই পর্যটকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। অনেকেই তাদের পরবর্তী ভারত ভ্রমণেই এ তিন জায়গার অন্তত একটিতে তারা যেতে চাচ্ছেন। আসুন দেখে নেই কেন এত উচ্ছ্বাস এ তিনটি জায়গাকে ঘিরে? কী আছে এসব সীমাবদ্ধ ও সংরক্ষিত জায়গায়?

লাদাখ:
থ্রি ইডিয়ট ছবিটি দেখেননি এরকম লোক পাওয়া খুব কঠিন। ছবির শেষ দৃশ্যে নায়ক আমির খানকে দেখা যায় লাদাখের একটি লেকে। প্রায় অপার্থিব এ লেকটির নাম প্যাংগং লেক। এ ছবি হিট হওয়ার পরই লাদাখে পর্যটকদের ভিড় বেড়ে যায়। বাদ যায়নি বাংলাদেশি পর্যটকরাও। থ্রি ইডিয়ট ছবির বিভিন্ন শ্যুটিং স্পটে গিয়ে ছবি তোলার জন্যও দেখা যায় বিশাল ভিড়।

শুধু প্যাংগং লেকই নয়, লেহ-লাদাখে রয়েছে নুব্রা ভ্যালি। এছাড়া বিখ্যাত জান্সকার নদী। মজার ব্যপার হলো, নদীর উপরে বরফ জমে গেলে তখন ট্রেক করে যাওয়া যায়। চাদার ট্রেক নামে খ্যাত এ ট্রেক পর্যটকদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। তবে অতি উচ্চতার কারণে অনেকেই লাদাখে উচ্চতাজনিত অসুস্থতায় ভোগেন। তাই লাদাখে যাবার পরিকল্পনা করলে এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে করবেন।
সিকিম:
বাংলাদেশের খুব কাছে ভারতের সিকিম রাজ্য। একদিকে চীনের তিব্বত, একদিকে নেপাল, অন্যদিকে ভুটানের পর্বত ঘেরা এ রাজ্যটিতেই আছে ভারতের সর্বোচ্চ পর্বত কাঞ্চনজংঘা। ৮,৫৩৪ মিটার উঁচু নয়ানাভিরাম এ পর্বতটি পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বত। সিকিমকে স্বর্গের সাথেই তুলনা করে সবাই।

পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি শহর দার্জিলিং হয়ে বাংলাদেশ থেকে সহজেই ঢোকা যাবে সিকিম। তবে এক্ষেত্রে আপনার ভারতের ভিসা থাকতে হবে ফুলবাড়ি (বাংলাবান্দা) বা চেংড়াবান্ধা (বুড়িমারী) সীমান্ত হয়ে। যারা ট্রেকিং ভালবাসেন তাদের জন্য বাংলাদেশের খুব কাছে এ ধরনের গন্তব্য আর একটিও পাওয়া যাবে না।
অরুণাচল:
ভারতের সেভেন সিস্টারসের মধ্যে অন্যতম রাজ্য অরুণাচল যাকে বলা হয় “ভোরের আলোকিত পাহাড় ভূমি”। উত্তর-পূর্বের এ রাজ্যটিকে ঘিরে আছে ভুটান, চীন, মায়ানমার ও ভারতের অাসাম রাজ্য। উপত্যকা, পর্বত, আর চকচকে সুন্দর নদী নিয়ে ভারতের এ রাজ্যটিকে প্রকৃতির গুপ্তধনও বলা হয়ে থাকে।
পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকলেও অরুণাচল কিন্তু এখনও সেভাবে জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে ওঠেনি। পুরোপুরি বিখ্যাত হয়ে যাবার আগে এখনই সর্বোত্তম সময় রাজ্যটি ঘুরে আসার। অবশ্য রাজ্য সরকার এখানে পর্যটনের প্রসারের জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছেন, যার মধ্যে একটি হচ্ছে নায়ক সালমান খানকে শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিয়োগ করা।

ইতোমধ্যে সালমান খান সেখানে ১০ কিলোমিটার মাউন্টেইন বাইসাইকেল চালিয়ে একটি মাউন্টেইন বাইকিং প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করে এসেছেন। তার একটি চলচ্চিত্রের শ্যুটিংও করা হবে অরুণাচলের বিভিন্ন প্রদেশে যেটা দেখে পর্যটকরা এ রাজ্যটিতে ভ্রমণের জন্য উৎসাহি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অরুণাচল রাজ্যটিতে দেখার জন্য বেশ কিছু জায়গা রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইটা নগর, বৌদ্ধ গুম্ফা, কাজু গ্রাম, অরেঞ্জ শহর, তাওয়াং গুম্ফা মঠ, বোমডিলা ইত্যাদি। বনভূমি, উপত্যকা, বৌদ্ধ সংস্কৃতির বিভিন্ন নিদর্শন আর দালাই লামার জন্মস্থান ছাড়াও এ রাজ্যে বসবাসরত আদিবাসীদের রঙিন জীবন যাত্রাও দেখার মতো বটে।

অরুণাচল যেতে হলে আগরতলা অথবা গুয়াহাটি হয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার ভিসা আগরতলা বা ডাউকি পোর্ট হয়ে থাকতে হবে। অরুণাচলের রাজধানী ইটানগরের সাথে আকাশপথে আগরতলা ও বান্দুরা এয়ারপোর্টও সংযুক্ত আছে। তাই এ সমস্ত জায়গা থেকেও বিমানে করে যেতে পারবেন।
আপনি যদি ট্রেকিং ভালবাসেন অথবা পর্বত খুব পছন্দ করে থাকেন, হাতের নাগালের মধ্যে সিকিম ও অরুণাচল ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারেন। এক সপ্তাহের জন্য এসব জায়গায় খরচও তেমন বেশি কিছু হবে না, ২০০ ডলারের মধ্যেই চাইলে শেষ করতে পারবেন। তবে লাদাখ যেতে ভালোই খরচ হবে। সেক্ষেত্রে অন্তত ৬০০ ডলার বাজেট করবেন।
ফিচার ইমেজ: thelandofsnows.com