শুকতারা প্রকৃতি নিবাস যেন সবুজের বুকে গড়ে ওঠা এক অন্যতম আকর্ষণ। সিলেট জেলায় দেখার মতো অসাধারণ অনেক জায়গা আছে। রয়েছে অনেক রিসোর্টও। তবে শুকতারা প্রকৃতি নিবাসের অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এটি পাহাড়ের কূল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে।
বলা যায়, পাহাড়ের বুকেই নির্মাণ করা হয়েছে শুকতারা প্রকৃতি নিবাস। চারপাশে সবুজ আর সবুজ। মাঝখানে কৃত্রিমভাবে গড়ে তোলা হয়েছে এই রিসোর্টটি। অত্যাধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় এই রিসোর্টে। অসাধারণ অভ্যন্তরীণ সজ্জা ও নান্দনিক স্টাইলে তৈরি করা হয়েছে রিসোর্টটি। সিলেটের খাদিমনগর ন্যাশনাল পার্ক অর্থাৎ খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের পাহাড়ের চূড়ায় নির্মাণ করা হয়েছে শুকতারা প্রকৃতি নিবাস।

১৪ একর বিশাল জায়গা জুড়ে এই রিসোর্টটির অবস্থান। পাহাড়ের সবুজের বুকে কৃত্রিমভাবে এটি তৈরি করা হলেও এতটুকুন প্রকৃতিতে আঁচড় পড়েনি। সবুজের বুকে যেন এক টুকরো শান্তির নিদর্শন পেতে বসে আছে শুকতারা প্রকৃতি নিবাস। এর নির্মাণশৈলী, স্থাপত্যশৈলী, অভ্যন্তরীণ নকশা ও সজ্জা যেকোনো মানুষকে পাগল করবে। আপনি নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না রিসোর্টটি কতটা আধুনিক ও শিল্পসম্মত।
কী নেই এই রিসোর্টে? সবকিছুই যেন তৈরি করা হয়েছে মনের মাধুরী মিশিয়ে। এখানে রয়েছে কটেজ, আলাপচারিতার ঘর, সভাকক্ষ, সুইমিং পুল, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ, সর্বক্ষণ গরম ও ঠাণ্ডা পানির সুব্যবস্থা, বাগান ইত্যাদি। বাগানের তাজা ফুলগুলো এখানকার অতিথিদের অভ্যর্থনা জানায় রোজ সকালে। চারপাশ ফুলের ঘ্রাণে মত্ত থাকে সারাক্ষণ।

বারান্দা থেকে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় শুকতারা নিবাস থেকে। এছাড়া পাখির কলকাকলি, রোদ, বৃষ্টি সবই উপভোগ করা যায়। শুকতারা নিবাসে যেন সুখ আর সুখ। যদিও এখানে আবাসন ব্যয় একটু বেশি। কারণ এটি অত্যন্ত বিলাসবহুলভাবে তৈরি করা হয়েছে। আর এজন্যই অন্যান্য হোটেল ও রিসোর্টের তুলনায় এখানকার ভাড়া একটু বেশি।

চা বাগানের পথ ধরে আগাতেই চোখে পড়বে একটি সবুজ টিলা। সমতল থেকে ৫০ ফুট উপরে দেখতে পাবেন ছোট ছোট কটেজ। কটেজগুলো মূহুর্তেই আপনার নজর কাড়বে সন্দেহ নেই। কটেজগুলো দেখলে আপনার তাৎক্ষণিক ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছে করবে। উঁচু টিলায় রয়েছে একাশিয়া রেস্টুরেন্ট। এটি তিনতলা বিশিষ্ট। দোতালায় খাবারের আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে। এর পাশেই রয়েছে কনফারেন্স রুম। এখানে একত্রে ৪০ জন মিটিং করতে পারে।
তিনতলায় রয়েছে সুন্দর ও আরামদায়ক বসার ঘর, আলাপচারিতার ঘর। তার পাশেই রয়েছে মনোরম পাঠাগার। এই পাঠাগারে রয়েছে অনেক বই। এখানে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা যেকোনো বই পড়তে পারে, সময় কাটাতে পারে। সিলেটের অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য সহ নানা ধরনের বই এতে রয়েছে। এছাড়াও দেশ বিদেশের যেকোনো বই রয়েছে এখানে।

শুধু তাই নয়। এই রিসোর্টে বিয়ে, গায়ে হলুদের সুন্দর ব্যবস্থাও রয়েছে। বিয়ে ও গায়ে হলুদের ব্যবস্থা করা হয়েছে তিনতলা বিল্ডিংয়ের নিচতলায়। প্রতিটি কক্ষ বেশ প্রশস্ত, আলোবাতাস পূর্ণ, আরামদায়ক। শীতাতপ ব্যবস্থা তো আছেই।

একাশিয়া থেকে বের হয়ে উজান পথে পূর্বের রাস্তা ধরে এগোলেই পাবেন বিশ্রাম নিবাস। সেখানেও রয়েছে নান্দনিক সকল কক্ষ। খোলা ছাদ। রয়েছে খোলামেলা রুম, খোলা বারান্দা। বারান্দায় দাঁড়ালেই চোখে পড়বে সবুজের বিশাল সম্ভার। এখান থেকে সুরমা নদীর বয়ে চলা দেখা যায়, সূর্যাস্ত দেখা যায়। প্রকৃতি তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে অপরূপ মায়া বিছিয়ে রেখেছে তার সবটা উপভোগ করা যায় এখান থেকে।
কখনো মনে হবে পাহাড়ের সারি আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে, কখনো মনে হবে সবুজ অরণ্যানী ইশারায় ডাকছে। মোট কথা, সমস্ত সময় কাটবে প্রকৃতির নৈসর্গিক দৃশ্যের মাঝে। এই রিসোর্টে কিছু ভাস্কর্য, শিল্পকর্ম, আলোকচিত্র ও পেইন্টিং রয়েছে। রিসোর্টে থাকাকালীন উপভোগ করতে পারবেন বাউল সঙ্গীত অথবা মণিপুরী নৃত্য। যে কয়েকটা দিন এখানে থাকবেন পুরোপুরি আনন্দে মেতে থাকবেন।

ভোরের রোদের স্পর্শ পেতে চাইলে কটেজের খোলা বারান্দা থেকে পাবেন। বৃষ্টিমুখর দারুণ সকাল কিংবা স্নিগ্ধ সন্ধ্যাও উপভোগ করতে পারবেন এখান থেকে। সিলেটে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। তাই বৃষ্টিময় দিন উপভোগ করতে পারবেনই বলা যায়।
রিসোর্টের প্রতিটি কটেজের আলাদা নাম রয়েছে। যেমন দোলনচাঁপা, নয়নতারা, বরুণ, শিরীষ, মাধবী লতা, জুঁই, কামিনী, হিজল, শিমুল, করবী ইত্যাদি। প্রতিটি নামই ফুলের নামে রাখা হয়েছে। বেশ নান্দনিক ও শ্রুতিমধুর সব নাম। এখানে শুধু অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা রয়েছে তা নয়; রয়েছে সুস্বাদু সকল খাবারের সুব্যবস্থাও।

এখানে সব রয়েছে। থাকার জন্য আলিশান রুম, ঘোরার জন্য অফুরন্ত জায়গা, ফুলের বাগান, চা বাগান, বৃষ্টি ছোঁয়ার জন্য খোলা বারান্দা, লাইব্রেরি, দেশী-বিদেশী সব বই, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুব্যবস্থা, সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা, উঁচু টিলা, পাহাড় ইত্যাদি সব রয়েছে। এছাড়া রিসোর্টের গাইডের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানকার পর্যটকদের জন্য নির্দিষ্ট গাইড রয়েছে। গাইডদের সাথে নিয়ে পর্যটকরা যেকোনো স্থানে যেতে পারে।
রিসোর্টের ভাড়া

শুকতারা প্রকৃতি নিবাসে রাত্রিযাপনের জন্য আপনাকে খরচ করতে হবে ৩,৫০০ টাকা থেকে ৬,৫০০ টাকা। এসি রুম ও নন এসি রুম উভয় রয়েছে। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও উৎসব ছাড়া সাধারণ দিনগুলোতে মূল মূল্যের উপর ১০% ছাড় পাবেন।
যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে সিলেটে যাওয়ার বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে। আকাশপথে, রেলপথে, সড়কপথে ঢাকা থেকে সিলেটে যাওয়া যায়। আকাশপথে সিলেটে গেলে অনেক কম সময়ে যাওয়া যাবে। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, রিজেন্ট এয়ার বিমানে করে স্বল্প সময়ে সিলেটে যেতে পারবেন।
বাসে গেলে গ্রীণলাইন পরিবহন, এনা পরিবহন, সৌদিয়া, এস আলম পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, হানিফ, মামুন, সিলকম পরিবহনে চড়ে যেতে পারবেন সিলেটে। এসি ও নন এসি বাস রয়েছে। ভাড়াবাবদ ব্যয় হবে ২৫০-৮০০ টাকা। বাসের মানভেদে ভাড়ার তারতম্য রয়েছে।
সিলেটের যেকোনো প্রান্ত থেকে সিএনজি কিংবা অটোতে চড়ে যেতে পারবেন শুকতারা রিসোর্টে। সিলেটের শাহজালাল (রাঃ) এর মাজারের কাছাকাছি খাদিমনগর ন্যাশনাল পার্কের পাশেই পাহাড়চূড়ায় এর অবস্থান। প্রকৃতির সঙ্গে রাত্রিযাপনের অনন্য সুযোগ পাবেন এখানে।
ফিচার ইমেজ সোর্স: vacationbd.com
Please give your contact number