নামিবিয়ায় মাছে ভরা নদী থেকে বিশাল মরুভূমি আবার কালাহারির বদ্ধ বালির স্তুপ থেকে আল্পস পর্বতমালা পর্যন্ত অত্যাশ্চর্য প্রাকৃতিক দৃশ্যের কোনো অভাব নেই। মরুভূমি এবং আধা মরুভূমি থেকে নামিবিয়ার শহুরে বিচ্ছিন্ন জীবনযাপনের দূরত্ব অনেক। নেটিভ উত্তর আফ্রিকার সাধারণ কিছু জাতীয় উদ্যান পাওয়া যায় সিংহ, হাতি, জেব্রা সহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীর আবাসস্থল। এখানের নদীগুলো অন্য দেশের উত্তর ও দক্ষিণে সীমানাগুলো চিহ্নিত করে।

Source: ToTheWonder
এখানে এবার মরুভূমি এবং নদীর পাশাপাশি অবস্থানের সাথে পাওয়া যায় মহিমান্বিত সূর্যাস্ত এবং বহিরাগত লক্ষ লক্ষ পাখিদের কিচিরমিচির। সমস্ত নামিবিয়া যেন প্রাকৃতিক ল্যান্ডস্কেপের একটা বিশাল ঝুড়ি। শত শত ফটোগ্রাফারেরা ল্যান্ডস্কেপ ও ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফির জন্য বছরের পর বছর এই এলাকায় পড়ে থাকেন। নামিবিয়ার বেশ কিছু প্রাচীন ল্যান্ডস্কেপ সম্পর্কিত কিছু বর্ণনা দিচ্ছি আজ।
নামিব-নওলুফ্ট জাতীয় উদ্যানের মৃত ভ্যালি
বিশাল মরুভূমির মাঝে পাহাড়ের মতো উঁচু বালির ধূসর প্রান্তরের মাঝে প্রাচীন বৃক্ষগুলো শাখা প্রশাখা বিস্তার করে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু নেই বৃক্ষগুলোর প্রাণ এবং এই মৃত বৃক্ষগুলো দাঁড়িয়ে আছে বিশাল বালির মরুভূমির মাঝে। সারাদিন প্রচণ্ড রোদের তাপে এই বৃক্ষগুলো শুকিয়ে হাড্ডিসারে পরিণত হয়েছে।

Source: ToTheWonder
ধূসর রঙের বালির স্তুপের সাথে নীল রঙের আকাশ মিশে ভূতপূর্ব সুন্দর দৃশ্যের সূচনা করেছে এই উদ্যানটিতে। কিছু কিছু মৃত গাছের বয়স প্রায় ১০০ বছরের বেশি। ফটোগ্রাফারদের জন্য চমৎকার একটি আদর্শ জায়গা এই ভ্যালিটি। বেশ কিছু সিনেমার শুটিংও এখানে নিয়মিত করা হয়ে থাকে।
কাওয়ান্দো নদী
৪৫০টিরও বেশি পাখির প্রজাতি, বোটসওয়ানার শীর্ষে প্রসারিত নামিবিয়ার প্যানহ্যান্ডলটি উপকূলীয়, সাব-ক্রান্তীয় এই জামবেজি অঞ্চলে বাস করে। সুন্দর কাওয়ানো নদী বয়ে গিয়েছে এই অঞ্চল জুড়ে, যা ববত, মুদুমু এবং নকাস রূপারা জাতীয় উদ্যানগুলোর মধ্য দিয়ে যায়। পার্কগুলো বনভূমি এবং প্লাবনভূমির একটি আকর্ষক মিশ্রণে গড়ে উঠেছে। দর্শনীয় কিছু বলতে ৪৫০ প্রজাতির পাখির জীবনধারণ কৌশল এবং হিপ্পো, ক্রোক, মশাল এবং বিরল অ্যান্টেলোপের আনাগোনাই বেশী মুখ্য।

Sourcce: Discover Africa Safaris
নামিবিয়া ক্যানিয়ন
প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ, ২৭ কিলোমিটার প্রশস্ত এবং ৫৫০ মি গভীর, এটি আফ্রিকার বৃহত্তম ক্যানিয়নগুলোর মধ্যে একটি। ১.৮ বিলিয়ন বছর আগে এর উৎপত্তি হয়েছিল বলে ক্রিপ্টোলজিস্টদের ধারণা। শত শত কিলোমিটার বিস্তৃত প্রান্তরের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে এই গভীর খাদের ক্যানিয়নটি। এই ক্যানিয়নের নদীতেই পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক মাছ। শুধু মাছ ধরতে নয় এখানে মানুষ কায়াকিং করতে চলে আসেন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে এবং ফটোগ্রাফারদের কাছে এই জায়গাটি স্বর্গরাজ্যের মতো।

Source: Getaway Magazine
স্যান্ডউইচ হারবার
ওয়ালভিস বে-নামিবিয়ার প্রধান বন্দর থেকে দক্ষিণে স্যান্ডউইচ হর্নের এভিয়ান-সমৃদ্ধ লেগুনে আপনাকে বন্য উপকূল বরাবর নিয়ে যাবে। বিশাল মরুভূমি শেষে নীল রংয়ের সমুদ্র শুরু হয়। এই অভাবনীয় দৃশ্যটি স্যান্ডউইচ হারবারে দেখা যায়। ধূসর রঙের বিশাল বালুর স্তুপের নিচে এই শেষ হয়েছে নীল রঙের সমুদ্র।

Source: Locationscout
এই জায়গাটির মায়া যে একবার গিয়েছে তার জন্য কখনোই ভোলা সম্ভব হয়নি। যদিও আপনি এখানে স্বাধীনভাবে যেতে পারেন। এর জন্য আপনাকে সমুদ্র পারাপারে হতে হবে অতি দক্ষ এবং ড্রাইভিংয়ের দক্ষতাও হতে হবে চূড়ান্ত মাত্রার। তাই একা একা না গিয়ে দলগতভাবে ভ্রমণ করাই সবথেকে বুদ্ধিমানের কাজ।
হোনিব নদী, কুনেনি অঞ্চল
মরুভূমি অঞ্চলের ছোট ছোট নদী তীরবর্তী অঞ্চলের বন্যপ্রাণী অবাধ বিচরণ দেখতে হলে চলে আসতে হবে এখানে। এখানে খুব কম মাত্রার বৃষ্টিপাত হয় বলে অঞ্চলটিতে নদীর জমে থাকা পানি স্থানীয় হাতি, সিংহ, অ্যান্টিলোপ, হরিণ, গন্ডার এবং অন্যান্য পশুপাখির বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। প্রচণ্ড ধুলোমাটি যুক্ত এই নদীর পানি মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ না হলেও এই প্রাণীদের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাই এখানে এসে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফাররা সব সময় টান টান উত্তেজনার মধ্যে থাকেন।

Source: Dissolve
এছাড়া এ অঞ্চলে দেখা যায় মরু-অভিযোজিত সিংহ, কালো কালো গায়েনের এক্স গায়েন, হাতি, অরেক্স এবং জিরাফ। শুষ্ক এই অঞ্চলে যদি হেঁটে আসেন তাহলে হবে সব থেকে বড় বোকামি। এর জন্য ট্রাভেলার বা ফটোগ্রাফারদের কোনো একটি দলের সাথে নির্দিষ্ট জিপে করে আসতে পারেন। এতে করে আপনার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে না। কিন্তু একা একা এসে যদি হারিয়ে যান তাহলে এখান থেকে বেঁচে ফেরাটা খুব বেশি সহজ হবে না।
ফেইরি সার্কেল
উত্তর নামিবিয়ার পেরিসাইকেল এলাকাটি একটি বিপজ্জনক এলাকা। বিশেষ করে আকাশ থেকে দেখা এই সার্কেলগুলো তৈরি হয় অনন্য বেশ কিছু কারণে। সাধারণত এই সার্কেলগুলো বিমান যাত্রার সময় দেখা যায়। নিচে গাছগুলোর ফাঁকে ফাঁকে বেশ কিছু বড় বড় গোল গোল ফাঁকা জায়গা। এই জায়গাগুলো মূলত কিছুটা গভীর হয়ে থাকে। লাল মাটির বিশাল মরুভূমির মাঝে এই বিষাক্ত ক্যাকটাসগুলোর ফাঁকে ফাঁকে এই জায়গাগুলোতে পানি জমে এবং এখানে বসবাস করা প্রাণীরা এই পানি খেয়ে বেঁচে থাকে।

Source: yallabook
এখানে বসবাসকারী প্রাণীদের মধ্যে বেশিরভাগই সরীসৃপ। ক্যাকটাসের জন্য এই অঞ্চলে খুব বেশি বড় প্রাণীর চলাচল লক্ষ্য করা যায় না। মাঝে মাঝে কিছু শেয়াল দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া বেশিরভাগই বিষাক্ত র্যাটেল স্নেকের মতো জীবজন্তু। তাই এই এলাকায় ভ্রমণ করতে চাইলে হয় নির্ধারিত ফরেস্ট অফিস অনুমোদিত গাইড নিয়ে হেঁটে অথবা আকাশ পথে ভ্রমণ করা যায়। যখন আপনি আকাশ পথে যাবেন তখনই এই গোলাকার সার্কেলগুলোর ছবি তুলতে পারবেন। শুধুমাত্র ফটোগ্রাফির জন্য এই সার্কেল জায়গাটি একটি দারুণ উদাহরণ।