আমাকে অনেকেই বলেছে ব্যাংককে যদি যান কখনও ফ্যামিলি নিয়ে যাবেন না এবং আমি অনেককেই দেখেছি ব্যাংককে পরিবার ছাড়াই যান। কিন্তু আমি ফ্যামিলিসহ ঘুরতে গিয়েছি, বরাবর যেটা করতে পছন্দ করি। সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টে নেমেই একটা প্রাইভেট সেডান কার নিয়ে ছুটলাম পাতায়া শহরের দিকে। আপনি চাইলে বাসে করেও যেতে পারেন।
এয়ারপোর্টের নিচতলায় পাতায়ার বাস কাউন্টার। ১৯৭৮ সালে পাতায়া শহরের নামকরণ করা হয়। পাতায়া থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে। ভ্রমণ পিপাসুরা, থাইল্যান্ডের যে কয়েকটি ভ্রমণযোগ্য শহরের কথা জানে তার মধ্যে পাতায়া অন্যতম। এটাকে এশিয়ার অন্যতম হানিমুন স্পটও বলা হয়ে থাকে। নাইট ক্লাব, রেস্তোরাঁ, সমুদ্রের তীর- সবকিছু একাকার। এক কথায় অন্য এক জগৎ।

পথে প্রচুর ফ্লাইওভার, ডাবল ট্রিপল লেনের ফ্লাইওভার পেরিয়ে সন্ধ্যার ঠিক আগ দিয়ে আমরা আমাদের বে ব্রিজ হোটেলে চলে আসলাম। হোটেলটা আমার খুব পছন্দের ছিল। হোটেলটার খুব কাছেই পাতায়া বিচ ছিল, পায়ে হেঁটেই যেখানে যাওয়া যায়। হোটেলে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে ধারে কাছেই এক বাঙালি রেস্টুরেন্টে গেলাম রাতের খাবার খেতে। রেস্টুরেন্টটির নাম ছিল কারি হ্যাভেন। মালিক খুব হেল্পফুল ছিলেন।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে রাতের পাতায়া ঘুরতে বের হলাম বিবি বাচ্চা সহ। বিচের পাড় ধরে হাঁটছি। চাকচিক্যময় রাতের পাতায়া শহর। মুগ্ধ হয়ে হাঁ করে দেখছি আমি। ভালো লাগা আর মন্দ লাগা সবই কাজ করছে একই সাথে আমার মধ্যে। বিচের পাড় ধরে আলো আঁধারের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে শত শত মেয়ে বিচিত্র পোশাকে আর সাজে। কেউবা বসে বসে বিয়ারের নেশায় বুঁদ হয়ে আছে।

পড়ন্ত বয়সের নারীও আছে দাঁড়িয়ে নিজের শেষটুকু দিয়ে পাতায়ার রাতকে রঙিন করতে। একজন পর্যটকের উক্তি, ‘ভালো লোকেরা স্বর্গে যায়, আর খারাপ লোকেরা পাতায়ায়’। এ অভিব্যক্তি পাতায়া শহরের স্লোগান বলেই প্রতীয়মান হয়। এই স্লোগানের মধ্যে বিদ্রূপের গন্ধ থাকলেও পাতায়ায় আসা অনেক পর্যটকের মানসিকতা যে এটাই, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

শুধু পাতায়ার রাতটুকু দিয়ে ব্যাংকককে বিচার করা ভুল হবে। এর বাইরে অনেক কিছু আছে যা তাদের অবস্থানকে করেছে মজবুত। পাতায়া শহরে একটি মেয়ে দেখবেন যেমন রাস্তায় অপেক্ষমান খদ্দেরের আশায়, ঠিক একইভাবে দেখবেন আরেকটি মেয়ে ওষুধের দোকানে সেলসওম্যান হিসেবে আপনাকে সার্ভিস দিচ্ছে। তাই আমি বলব যারা বলে ব্যাংককে ফ্যামিলি নিয়ে যাবেন না- তারা ভুল বলে এবং তারা নিজের কাছে সৎ নয়।
এর ফাঁকে নিজেকে কিছুটা ব্যস্ত রাখলাম ছবি তোলার কাজে। আর সাথে চিন্তা করছি এই ব্যাংকক শহরে যা কিছু উন্নত, যা কিছু আধুনিক আর নিয়ম-কানুন তা সবই সম্ভব আমার দেশ বাংলাদেশের পক্ষে। চাইলেই আমরা ব্যাংকক থেকে উন্নত অর্থনীতির ভিত গড়ে তুলতে পারি।

মিউজিক আমি বরাবরই পছন্দ করি। হাই-বিটের ওপেন কনসার্ট আপনি পাতায়া শহরে প্রত্যেকটি বারের সামনে দেখতে পারবেন। এই ধরনের ওপেন কনসার্ট প্রথমে আমি দেখি নেপালের পোখরাতে। মন ছুঁয়ে যাওয়া ভালো লাগা কাজ করছিল এই ওপেন কনসার্ট দেখে। আর রাস্তায় চলছিল বিটের তালে তালে স্ট্রীট ড্যান্স। মাইন্ড ব্লোয়িং- অসাধারণ।
সবাই টাকা দিচ্ছে তাদের। সাথে আমিও তাদের দিলাম ৩০ বাথ। আমরা বেশ কিছুক্ষণ বারে বসে তাদের ড্যান্স আর মিউজিক শুনলাম। পাতায়ায় একটা ফ্রি ভেহিকল রোড আছে, সেখানে শত শত বার। গেলেই আপনার মন ও শরীর ভালো হয়ে যাবে। কারণ মিউজিক আর ড্যান্স থেরাপি হিসেবে কাজ করে।

আলো ঝলমল এই পাতায়া শহরে স্ট্রীট ফুডের অভাব নেই। সি ফিশ থেকে শুরু করে নানা জাতের নাম না জানা খাবার আর সাথে হরেক ধরনের বাহারি ফলের সমাহার। আপনার যদি কোনো হালাল-হারামের বাছবিচার যদি না থাকে তাহলে অনায়াসেই কম টাকায় আপনার খাবার খেয়ে নিতে পারবেন। কিন্তু আমাদের এটা বাতিক থাকায় আমরা শুধু ফল খেয়েছি। অসাধারণ তার স্বাদ।
পাতায়ায় যেসব জায়গা আপনি ঘুরে দেখতে পারেন –
কোরাল আইল্যান্ড ট্যুর- এই আইল্যান্ডে যাওয়ার সময় অবশ্যই শর্ট প্যান্ট আর টি-শার্ট পরে যাবেন। মেয়েরা তাদের প্রয়োজনীয় কাপড় সাথে করে নিতে ভুলবেন না। স্বচ্ছ পানির এই বিচ ট্যুরটি আপনাদের ভালো লাগবে আশা করি। জনপ্রতি ৩৫০ বাথ দিয়ে আপনি এই ট্যুরটি করতে পারবেন। তবে সেখানে গিয়ে বিভিন্ন রাইড চড়লে আপনাকে বাড়তি বাথ গুনতে হবে।

এই পাতায়াতে আছে আন্ডার ওয়াটার ওয়ার্ল্ড মানে পাতাল একুরিয়াম। বড় –ছোট সবার মন কেড়ে নেবে নিমেষেই। আর বিশ্বের প্রথম কার্টুন নেটওয়ার্ক থিম পার্কটি আছে এই পাতায়া শহরেই। ঘুরে আসতে পারেন, আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে এই জায়গাটি।
তারপর চলে যেতে পারেন পাতায়ার ভাসমান বাজার বা ফ্লোটিং মার্কেটে। কেনার মতো কিছু না পেলে দেখার মতো অনেক কিছুই পাবেন এখানে। পাতায়ার শ্রী রাচা টাইগার পার্ক এক কথায় অসাধারণ। এই পার্কে নাকি ২০০ এর মতো টাইগার আছে।

আরেকটি বিষয় পাতায়া কিংবা ব্যাংকক সর্বত্র নারিদের আধিপত্য। বাসের কন্ডাকটর থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্টের ওয়েটার পর্যন্ত সবই মেয়ে। এদের উন্নতির মূলে রয়েছে মেয়েদের অংশগ্রহণ।
দেখার মতো জায়গার অভাব নেই পাতায়ায়। আপনি চাইলে গুগল ম্যাপ দেখে সেরা স্থানগুলো আগেই বাছাই করে রাখতে পারেন। একটু খোঁজ-খবর নিয়ে গেলে মোটামুটি স্বল্প খরচে ঘুরে আসতে পারবেন। পরবর্তী লেখা নিয়ে আবারও আপনাদের সামনে আসব ইন শা আল্লাহ।
ফিচার ইমেজ- wikimedia.org
you are absolutely right.
নাইস