কক্সবাজারে এখন থাকার জায়গা নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। বিনোদনের জন্য অবকাঠামো সেভাবে গড়ে না উঠলেও হোটেল রিসোর্ট গড়ে উঠছে প্রতি বছরই। এত এত রিসোর্ট আর হোটেলের মাঝে রীতিমতো গবেষণা করে বের করতে হয় কোনটায় থাকলে সবচেয়ে ভালো হয়। তবে এতগুলো হোটেল রিসোর্টের মধ্যেও ব্যতিক্রম মারমেইড বিচ রিসোর্ট। কক্সবাজার শহর থেকে বেশ দূরে হিমছড়ির প্যাঁচার দ্বীপ নামক জায়গায় এর অবস্থান।
কক্সবাজার থেকে মেরিনড্রাইভ হয়ে মারমেইডে যেতে হলে হিমছড়ি পার হয়ে আসতে হবে। দূরত্ব মোটামুটি ১৫-১৬ কিমি হবে, আর ইজি বাইকে করে আপনার সময় লাগবে এক ঘণ্টার মতো। একবার এখানে আসলে আপনার মনে হবে আর কক্সবাজার ফিরে না যাই। এর প্রধান কারণ হচ্ছে এ রিসোর্টটি শুধু যে দেখতেই অসম্ভব সুন্দর তা নয়, পুরো এলাকাটায় কোনো কোলাহল আর জনসমুদ্র নেই বলে পুরো সৈকতটাই নিজেদের মতো করে উপভোগ করা যায়।

‘বর্ন সুপ্রিমেসি’ ছবিটি কি দেখেছিলেন? ছবির নায়ককে ভারতের গোয়াতে একটা রিসোর্ট ভাড়া নিয়ে থাকতে দেখা যায়। এ রিসোর্টটা দেখে আমার প্রথম সেই ছবিটির কথাই মনে পড়েছে। বেশ বড়সড় জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে কটেজ, ভিলা আর স্যুইটগুলো। অনেকেই মনে করে শুধু হানিমুনে বা দম্পতিরাই আসে এখানে। ব্যাপারটা কিন্তু সেরকম না, পরিবারের সব সদস্যকে নিয়েও অনেকেই আসে এখানে।
তবে বলার অপেক্ষা রাখে না হানিমুনের জন্য দেশের ভেতরে সেরা জায়গা এই রিসোর্টটাই। অনেকগুলো কারণে হানিমুনে আসা দম্পতিদের কাছে এই রিসোর্টটা সেরা। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সৈকতে যখন হাঁটবেন তখন আশেপাশে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকা অভদ্র মানুষগুলোকে দেখতে হবে না। মারমেইডের সমুদ্র সৈকত যেন একটি প্রাইভেট সমুদ্র সৈকত। বাইরের লোকজন দেখা যায় না বললেই চলে।

এছাড়া কটেজগুলো এমন সুন্দর দূরত্ব রেখে তৈরী করা হয়েছে, একেকটি কটেজ যেন একেক জনের বাড়ী। শুধু দেখতেই যে কটেজগুলো সুন্দর তা নয়, এর ভেতরের ইনটেরিয়রও বিশ্বমানের। প্রতিটি আসবাব এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে এর প্রতিটি জিনিসেই রয়েছে শিল্পের ছাপ। বেশিরভাগ জিনিসপত্র কাঠ, বাঁশ আর বেতের তৈরী। কটেজের বাইরে ঝুলছে হ্যামক, সৈকত থেকে ফিরে পরিস্কার মাটির পাত্রে রাখা পানি।
পুরো রিসোর্টে ঘোরাঘুরি করার জন্য আছে বাইসাইকেল। এছাড়া প্রথম যখন পৌঁছাবেন তখন সত্যি সত্যি ইজিবাইকে করে আপনাকে রুমে রেখে আসবে। কটেজে পৌঁছে যখন দেখবেন আপনাদের নামেই কটেজের নামকরণ করা আছে, সেটা দেখলেই মন ভালো হয়ে যাবে। কটেজের বাথরুমও খুব পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, ভেতরের ফিটিংস ও টয়লেট্রিজও আন্তর্জাতিক মানের।

সকালের নাস্তা করতে হয় মূল লবির সাথের রেস্তোরাঁয়। সকাল বেলা যখন নাস্তা করতে আসে সবাই, জোয়ার থাকলে সমুদ্রের পাশে বসেই নাস্তা করার অনুভূতি হয়। আসলে এটি একটি খাল, যেটা জোয়ারের সময় ভরে যায়। ইংলিশ ব্রেকফাস্ট ও বাংলাদেশি ব্রেকফাস্ট দুটোই চাহিদামাফিক সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি খাবারই স্ব্যাস্থসম্মত ও সুস্বাদুভাবে তৈরী করা হয়।

তবে মারমেইডের বিশেষত্ব এর সী ফুড রাতের বা দুপুরের খাবার। এতই ভালো যে, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন অনেকেই শুধু ডিনার বা লাঞ্চ করতেই হাজির হয় এখানে। দামটাও অবশ্য সেরকম। তবে আপনি যদি কাপল প্যাকেজ কিনে থাকেন তবে খাবারের দাম নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। কারণ কাপল প্যাকেজগুলোতে তিন বেলার খাবারও প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত থাকে।
হানিমুনে যারা এই রিসোর্টে আসেন মারমেইড কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য রাখেন বিশেষ কিছু ব্যবস্থা। এর মধ্যে সবচেয়ে রোমান্টিক আয়োজন হচ্ছে জোয়ারের সময় নৌকায় ক্যান্ডেল লাইট ডিনার। নৌকাতেই আয়োজন করা এই ডিনারটি হতে পারে আপনার জীবনের সবচেয়ে মধুর ও মনে রাখার মতো ডিনার।
রিসোর্টে কায়াকও আছে। চাইলে কায়াক নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন খালের পানিতে। যদি মোটামুটি দক্ষ চালক না হন তবে সমুদ্রে কায়াকিং না করে খালের মধ্যেই থাকা ভালো। এছাড়া জোয়ার ভাটা দেখে বের হবেন। ভাটার টান ভয়াবহ, এটার প্রতিকূলে কায়াক কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

এ তো গেলো শুধু রিসোর্টের কথা। আশেপাশেও কিন্তু বেশ কয়েকটি সুন্দর জায়গা আছে। রিসোর্ট থেকে খুব কাছেই হিমছড়ি। চাইলে হিমছড়ি এসে পাহাড়ের উপর থেকে সমুদ্রের মাঝে ধীরে ধীরে বিলীন হওয়া সূর্যাস্ত দেখতে পারেন। পথেই এক জায়গায় প্যারাসেইলিংও হয় হিমছড়িতে। সেখানে গিয়ে প্যারাসেইলিংও করতে পারেন। আর উল্টোদিকে গেলে ইনানি সৈকতে যেতে পারেন।
যদি কক্সবাজার শহরে যাবার দরকার পড়ে রিসোর্টে বললেই ওরা ইজিবাইক ডেকে দিবে। যদিও আমি নিশ্চিত ওখানে থাকলে আপনাদের শহরে আসতে একেবারেই ইচ্ছে করবে না। রিসোর্টে ডিভিডি ভাড়া পাওয়া যায়। হাই স্পীড ফ্রি ইন্টারনেটও রয়েছে। রয়েছে একটি চমৎকার কচ্ছপের প্রতিকৃতি। মূলত সামুদ্রিক কচ্ছপ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর জন্যই এটি স্থাপন করা হয়েছে।

এবার আসা যাক খরচপাতির হিসেবে। মারমেইডের এসব সুযোগ সুবিধার কারণে স্বভাবতই এর খরচ কিন্তু ভালোই। কী ধরনের থাকার ব্যবস্থা আপনি নিচ্ছেন তার উপর ভাড়ার বিষয়টা নির্ভর করে। এছাড়া বছরের পিক ও অফ সিজনের কারণেও ভাড়ার বড়সড় তারতম্য হয়। যেমন ঈদের পরে এবং শীতের সময়টায় ভাড়া সর্বোচ্চ থাকে। বছরের অন্য সময়গুলোতে বড়সড় ছাড়ও দেয়া হয়।
যেমন ধরুন এখন মারমেইডে ৫০% ছাড় চলছে। কাপল প্যাকেজ ১ রাতের জন্য থাকা ও তিন বেলা খাওয়ার জন্য ১৩,৫০০ টাকা সাথে ভ্যাট আর ২ রাতের জন্য ১৯,৮০০ টাকা। বিস্তারিত পাবেন মারমেইডের ওয়েবসাইটে। এছাড়া তাদের ফেইসবুক পেইজেও দেখতে পারেন।
ওয়েবসাইট: http://www.mermaidbeachresort.net/
ফেইসবুক: https://www.facebook.com/MermaidBeachResort/
ফোন নাম্বার: ০১৮৪১৪১৬৪৬৮৬৯
ফিচার ছবি: mermaidbeachresort.net