পুরো বিশ্বভ্রমণ নিঃসন্দেহে ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ একটি ব্যাপার। অনেক ক্ষেত্রে এটি অসম্ভব হয়েও দাঁড়ায়। তাই বলে বিশ্বকে ঘুরে দেখার প্রবল বাসনাকে চেপে রাখাও উচিৎ নয় কোনোভাবেই। নিচের এই ১০টি দেশ ঘুরে দেখতে পারলে পুরো বিশ্ব সম্পর্কেই বেশ ভালো একটা ধারণা পাবেন আপনি।
১০. নিউজিল্যান্ড:
নিউজিল্যান্ড সারা বিশ্বেই পর্যটকদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কী নেই দেশটিতে? অসাধারণ সব সমুদ্র সৈকত, বরফে আচ্ছাদিত শ্বেত শুভ্র পর্বতের চূড়া, আরামদায়ক হট পুল কিংবা বরফের গ্লেসিয়ার, সবকিছুই আপনি একসাথে পেয়ে যাবেন নিউজিল্যান্ডে। সেই সাথে আছে সবুজে ঘেরা ঘন জঙ্গলে ক্যাম্পিং আর রাতের ঝকঝকে আকাশে এক রাশ তারা দেখে উদাস হয়ে যাওয়ার হাতছানি!
৯. ব্রাজিল:
আলাস্কা বাদ দিলে ব্রাজিল আমেরিকার থেকেও বিশাল এক দেশ। এর আকারের মতোই সুবিশাল সংখ্যক স্বতন্ত্র সংস্কৃতির অধিকারী এই দেশটি। পাঁচদিন ব্যাপী, বিখ্যাত ব্রাজিলিয়ান কার্নিভালের সাম্বা নাচের দোলায় উন্মাতাল হতে সারা বিশ্ব থেকে প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক ছুটে আসেন এখানে।
বৈচিত্র্য ছড়িয়ে আছে ব্রাজিলের পরতে পরতে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকেও দেশটি অতুলনীয়। আছে মনোমুগ্ধকর অসংখ্য সৈকত, ঝর্ণা, পাহাড়, পর্বত।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাতটিও ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। নাম ইগুয়াসু ফলস। আর আছে অ্যামাজন!
৮. দক্ষিণ আফ্রিকা:
বিশ্বের সেরা সব সাফারির রুদ্ধশ্বাস রোমাঞ্চ উপভোগের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই। দেশটি বৈচিত্র্যময় নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক দেশটির অন্যতম প্রধান সাফারি গন্তব্য। এছাড়াও কেপটাউনের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার বড় শহরগুলো ঘুরে দেখার জন্য নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয়। শহর ঘোরা শেষে আপনার বুনো আদিম প্রবৃত্তিগুলোর খোঁজ পেতে এখানকার দুর্গম কয়েকটি গ্রামেও ঘুরে আসতে পারেন। মুখোমুখি হবেন বিস্ময়কর এবং অবর্ণনীয় সব অভিজ্ঞতার।
৭. পেরু:
গভীর জঙ্গল, সৈকত সংলগ্ন মরুভূমি বা কোস্টাল ডেজার্ট, আন্দিজ পর্বত আর বিখ্যাত ইনকা ট্রেইল- ব্যাকপ্যাকারদের জন্য পেরু এক টুকরো স্বর্গের নাম! এখানকার নৈশ জীবন বা নাইট লাইফের একটা আলাদা আবেদন আছে পর্যটকদের কাছে। আর পেরুর মাচু পিচুর কথা নতুন করে বলতে হবে না নিশ্চয়ই!
৬. মিশর:
দেখার মতো অনেক কিছুই আছে প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্রস্থল নীল নদের মিশরে। এখানকার পিরামিডগুলো আধুনিক সময়েও মানুষকে ভাবিয়ে চলেছে, বিস্মিত করে চলেছে। হয়তো এখনো মিশরের মরুভূমির নিচে লুকিয়ে আছে হাজার বছরের পুরনো কোনো সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ।
৫. আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র:
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই দেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকেও প্রথম সারিতেই অবস্থান করছে। নায়াগ্রা ফলস, ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্কের মতো দারুণ সুন্দর সব জায়গা আছে সেখানে। আছে ফ্রান্সের দেয়া উপহার বিখ্যাত স্ট্যাচু অফ লিবার্টি। শুধুমাত্র লাস ভেগাসে কিছুদিন আয়েশ করে সময় কাটাতেও অনেকে পাড়ি জমান আমেরিকায়।
৪. চীন:
প্রাচীন স্থাপনা, পাহাড়, পর্বত, বন আর নদী চীনকে দিয়েছে অতুলনীয় রূপ। দারিদ্র আর অবকাঠামোগত কারণে চীন পর্যটকদের কাছে কিছুদিন আগেও তেমন জনপ্রিয় ছিল না। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে পর্যটন খাতেও দ্রুত উন্নতি ঘটাচ্ছে দেশটি। চীনের গ্রেট ওয়াল বর্তমানে অসংখ্য পর্যটকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
৩. ফ্রান্স:
ফ্রান্সকে ইউরোপের শিল্প সাহিত্যের বাতিঘর বললে ভুল বলা হবে না। দেশটির লুভর মিউজিয়াম শুধু ইউরোপেরই নয়, বরং পুরো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মূল্যবান সব প্রত্নতাত্বিক এবং শৈল্পিক সম্ভারে সাজানো আছে। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসার প্রকৃত দাবিদার ইতালি হলেও ফ্রান্স কিন্তু এর মালিকানা ছেড়ে দেয়নি!
দেশটি সুগন্ধিশিল্প আর রন্ধনশিল্পের জন্যও পর্যটকদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়। সেই সাথে আছে প্যারিসের বিখ্যাত আইফেল টাওয়ার।
২. ভারত:
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত বৈচিত্র্যে ভরপুর। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর, বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের মিশেল ঘটেছে দেশটিতে। ভারতে যেমন হয় প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত, তেমনি এখানে আছে ধু ধু মরুভূমি। আবার শীতের সময় এর বেশ কয়েকটি রাজ্যে হয় তুষারপাত! হিমাচল, মেঘালয়, সিকিম, রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলোর প্রতিটির আছে আলাদা প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য।
ভারতে আছে ঐতিহাসিক নানা স্থাপনা। শুধুমাত্র তাজমহলের দেখা পেতেই লাখ লাখ পর্যটক ছুটে যান দেশটিতে। আমাদের দেশ থেকেও বর্তমানে অসংখ্য মানুষ ছুটে যাচ্ছেন ভারতে, এর মোহনীয় রূপের ঝলক দেখতে!
১. নেপাল:
পর্বত রাজ মাউন্ট এভারেস্ট অবস্থান করছে এই দেশটিতে। হিমালয়ের অন্যান্য পর্বত শ্রেণী তো আছেই। মাউন্টেইন ক্লাইম্বিং আর ট্রেকিংয়ের জন্য বিশ্বে নেপালের অন্যরকম কদর আছে। নেপালে ট্রেকিংয়ে বেরিয়ে পড়লে বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের সাথে সহজেই সখ্যতা গড়ে তুলতে পারবেন আপনি। আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা বলতে গেলে বলতেই হবে, নেপালের স্বর্গীয় রূপের কোনো তুলনাই হয় না। নেপালে আপনি আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়াও পেয়ে যাবেন। সেই সাথে কম খরচে ব্যাকপ্যাকিং ট্রিপের যোগাড়যন্ত্র করে ফেলতে পারেন সহজেই।
০. বাংলাদেশ:
বিশ্ব ভ্রমণের স্বাদ পেতে হলে আপনাকে এই দশটি দেশ ঘুরে দেখতে হবে অবশ্যই। তবে সেটা নিশ্চয়ই নিজের দেশকে বাদ দিয়ে নয়! আগে নিজের দেশটি ঘুরে দেখুন এবং অবশ্যই অবশ্যই একে পরিচ্ছন্ন রাখুন!
ফিচার ইমেজ- europevintage.com
তথ্যসূত্রঃ
১. roughguides.com
২. tripadvisor.com
৩. sputnikinternational.com
৪. discoverwalks.com