আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। অনেকের মতে, সম্পূর্ণ ভারত ভ্রমণ করলে নাকি সারা বিশ্ব ঘোরার অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়। কথাটার সত্য মিথ্যা জানি না, তবে ‘যা রটে তার কিছু তো বটে’। ভারতের একদিকে যেমন আছে বরফে আচ্ছাদিত অঞ্চল, তেমনি আছে বিশাল মরুঅঞ্চল। এখানে আছে সুন্দর সমুদ্রসৈকত, আছে কাঞ্চনজঙ্ঘার মতো সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। তাই নিজ গণ্ডি থেকে বের হয়ে বিশ্বভ্রমণে বের হলে আমাদের জন্য সবচেয়ে সহজতর নামটি হলো ভারত।
কয়েক বছর আগেও ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসা পাওয়াটা বেশ কঠিন ছিল। তবে ভারতের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি হওয়ায় এখন সেটা অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে। কাগজপত্র ঠিকঠাক জমা দেয়াসহ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলেই ভিসা পাওয়া যায় খুব দ্রুত সময়ে। আজকে এই পর্বে ভারতের ভিসা আবেদনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বর্ণনার চেষ্টা করবো। আশা করি ভিসা সম্পর্কিত আর কোনো জটিলতা থাকবে না।

IVAC, Jamuna Future Park; সোর্সঃ www.youtube.com
ভিসা আবেদনের জন্য যা যা লাগবে
প্রথমেই জেনে নেই ট্যুরিস্ট ভিসা আবেদনের জন্য কী কী কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
১/ জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
২/ আপনার বর্তমান ঠিকানার বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি
৩/ আপনার পাসপোর্টের ২ ও ৩ নং পৃষ্ঠার ফটোকপি
৪/ আপনার বর্তমান পেশার আইডি কার্ডের ফটোকপি (ছাত্র হয়ে থাকলে স্টুডেন্ট আইডি)
৫/ আপনার ব্যাংক একাউন্টের শেষ ছয় মাসের ব্যাংক স্টেট্মেন্ট পেপারের ফটোকপি
৬/ যদি ব্যাংক স্টেট্মেন্ট পেপার না থাকে তবে ডলার এন্ডোর্সমেন্ট পেপারের ফটোকপি সাথে পাসপোর্টের শেষপাতার ডলার এন্ডোর্সমেন্ট সিলের ফটোকপি
৭/ ২”×২” (দুই ইঞ্চি বাই দুই ইঞ্চি) এক কপি ছবি। সফট কপি এবং হার্ড কপি উভয়ই লাগবে।
ব্যাংক স্টেট্মেন্ট সম্পর্কিত জটিলতা
ব্যাংক স্টেট্মেন্ট বলতে আসলে আপনার একাউন্টের ট্রাঞ্জেকশনের ডিটেইলস কপিকে বোঝায়। সবচেয়ে ভালো হয় নিজের ব্যাংক একাউন্টের স্টেট্মেন্ট পেপার বের করে জমা দেয়া। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, একাউন্টে অবশ্যই কমপক্ষে বিশ হাজার টাকা থাকতে হবে এবং কমপক্ষে গত ছয় মাসের ট্যাঞ্জেকশনের স্ট্যাটমেন্ট নিতে হবে।
যদি নিজের একাউন্ট না থাকে এবং আপনি ছাত্র হয়ে থাকেন তবে বাবা অথবা মায়ের ব্যাংক একাউন্টের স্টেট্মেন্ট পেপারের ফটোকপি জমা দিলেও হবে।
যে ব্যাংকে একাউন্ট আছে সে ব্যাংকে গিয়েই স্টেট্মেন্ট সংগ্রহ করতে পারবেন। ব্যাংক ভেদে ২০০-৩০০ টাকায় স্টেট্মেন্ট উঠানো যায়। তবে সরকারি ব্যাংক হলে কিছুটা ঝামেলা পোহাতে হতে পারে।

ব্যাংক স্টেট্মেন্ট পেপার; সোর্সঃ লেখক
ডলার এন্ডোর্সমেন্ট সম্পর্কিত জটিলতা
যদি কোনো কারণে ব্যাংক স্টেটমেন্ট নেয়া সম্ভব না হয় তবে ডলার এন্ডোর্সমেন্ট কপি জমা দেয়ার অপশনটি আপনার হাতেই থাকছে। ডলার এন্ডোর্সমেন্ট বলতে বোঝায় ডলার ক্রয় করাকে।
তবে সব ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে পারবেন না। মতিঝিলের শাখাগুলোয় সাধারণত ডলার কেনা যায়। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ব্যাংকে গিয়ে ডলার এন্ডোর্সমেন্টের জন্য ফর্ম ফিলাপ করতে হবে। নির্ধারিত রেটে ডলার কেনার পর তারা ডলার এন্ডোর্সমেন্ট কপি দিবে। সাথে পাসপোর্টের শেষ পাতায় সিল দিয়ে দিবে।
পাসপোর্টের ২ ও ৩ নং পাতা এবং শেষ পাতায় যেখানে সিল দেয়া হয়েছে, এই দুটো ফটোকপি ব্যাংকে জমা দিয়ে ডলার সংগ্রহ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে দেখে নিবেন, ডলার যেন ২০০৯ সিরিজ অথবা তার পরের সিরিজের হয়। এর থেকে পুরোনো ডলার কিনলে ভারতে রেট কম পাবেন। এবং ডলার সবগুলো ১০০ ডলারের নোট নিবেন। ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য ১৫০-২০০ ডলারের এন্ডোর্সমেন্ট করলেই হবে।

ডলার এন্ডোর্সমেন্ট পেপার; সোর্সঃ লেখক
কাগজপত্র সব রেডি করার পর আপনাকে অনলাইন ফর্ম ফিলাপ করতে হবে। অনলাইন ফর্ম ফিলাপ করার জন্য ক্লিক করুন এই লিংকেঃ
https://indianvisa-bangladesh.nic.in/visa/Registration
সাবধানতার সাথে সম্পূর্ণ ফর্ম ফিলাপ করে ছবির সফট কপি আপলোড করে ফর্মের পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করে নিতে হবে। যেকোনো কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে পিডিএফ ফাইলটি প্রিন্ট করে নিতে হবে। প্রিন্ট করার পর নির্দিষ্ট স্থানে স্বাক্ষর (যে স্বাক্ষর পাসপোর্টে করা আছে) করতে হবে এবং আঠা দিয়ে ২”×২” ছবি নির্দিষ্ট স্থানে লাগাতে হবে। এখানে মনে রাখবেন ছবির সফট এবং হার্ড কপি একই হতে হবে।
ফর্ম ফিলাপের পরবর্তী ৪ দিনের মধ্যে আপনাকে আপনার কাছের ইন্ডিয়ান ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টার (IVAC)-এ গিয়ে ফর্মসহ সকল কাগজপত্র জমা দিতে হবে। ৪ দিন পর আপনার ডাটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাইট থেকে মুছে যাবে। সেক্ষেত্রে আবার ফর্ম ফিলাপ করতে হবে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ফর্ম জমা নেওয়া হয়।
ফর্ম জমা দেয়ার আগে অবশ্যই ভিসা ফি ৮৪০ টাকা জমা দিতে হবে। ঢাকায় যারা থাকেন তারা যমুনায় ইন্ডিয়ান ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টারের সামনেই ইউক্যাশের বুথ আছে। সেখানে গিয়ে সহজেই টাকা জমা দিতে পারবেন কোনো ঝামেলা ছাড়া।
ডলার এন্ডোর্সমেন্ট কপি যারা নিবেন তারা অবশ্যই সাথে করে ডলার নিয়ে যাবেন। কারণ অনেক সময় তারা ডলার দেখতে চায়।

পাসপোর্টের শেষ পাতায় ডলার এন্ডোর্সমেন্টের সিল; সোর্সঃ tourguideline.com
ফর্ম এবং পাসপোর্ট জমা দেয়ার পর তারা আপনাকে একটি টোকেন দিবে। যেখানে পাসপোর্ট ডেলিভারের সম্ভাব্য ডেট দেয়া থাকবে। একদিন পরে IVAC থেকে ফর্ম রিসিভ হওয়ার মেসেজ আসবে। এবং আনুমানিক ৭-১০ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট ডেলিভার নেওয়ার জন্য মেসেজ আসবে।
তবে অনেক সময় মেসেজ না আসলেও অনলাইনে পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা ট্র্যাক করতে পারবেন। এজন্য ক্লিক করতে হবে নিচের লিংকেঃ
http://www.ivacbd.com/existing/application_track.php
লিংকে ক্লিক করে এবাভ কোড (উপরের যে কোডটা থাকে) এবং ওয়েব ফাইল নাম্বার (টোকেনে দেয়া থাকবে) দিয়ে সাবমিট করলেই আপনার পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা দেখাবে।
চারটি অপশনের প্রথম তিনটিতে ডান (Done) লেখা থাকলেই আপনি পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন। দুপুর ৩টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পাসপোর্ট সংগ্রহ করা যাবে।

ইন্ডিয়ান ভিসা; সোর্সঃ লেখক
পরবর্তী পর্বে থাকবে ভারতের অনলাইন ভিসা এপ্লিকেশন ফর্ম ফিলাপের সকল খুঁটিনাটি।
বিঃদ্রঃ অযথা দালালের পাল্লায় পড়বেন না, IVAC এর সামনে অনেক দালাল ঘোরাঘুরি করে এবং তারা নানা আজেবাজে কথা বলে আপনাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। তাদের কথায় কান না দিয়ে নিজের কাজ নিজে করবেন।
Feature Image: www.goibibo.com