ভ্রমণের মাধ্যমে অজানা রহস্য উদঘাটন করা যায়, অদেখা সকল স্থান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করা যায়। নিজ দেশের আনাচ কানাচ থেকে শুরু করে পুরো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় এবং সে দেশের মানুষ, আচার-আচরণ, কৃষ্টি, সভ্যতা, জীবনযাত্রা ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা যায়। আপনি যদি ভ্রমণ পিপাসু হন তাহলে ভ্রমণের পাশাপাশি একটি ট্রাভেল জার্নাল কিংবা ভ্রমণের ডায়েরি লিখতে পারেন।
আরেকটু শৈল্পিকভাবে বললে বলতে হয় ভ্রমণের রোজনামচা লিখতে পারেন। এই কাজটি আপনার ভ্রমণকে আরো সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সেই সাথে আপনার শিল্প মনের প্রকাশ ঘটবে। তাছাড়া এর মাধ্যমে প্রতিটি ভ্রমণকে স্মরণীয় করে রাখতে পারবেন। জেনে নিন কীভাবে ট্রাভেল জার্নাল লিখবেন তা সম্পর্কে।
হার্ড কভারের ডায়েরি কিনুন
ট্রাভেল জার্নাল লেখার জন্য প্রথমে একটি হার্ড কভারের ডায়েরি কিনুন। এই ডায়েরিতে আপনি নিজের ইচ্ছে মতো মনের মাধুরী মিশিয়ে আপনার ভ্রমণ সম্পর্কিত বিষয় লিখতে পারবেন। প্রয়োজনে স্কেচ করতে পারবেন। ডায়েরি কেনার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন এর বাঁধাই যেন মজবুত হয়।

নয়তো কিছুদিনের মধ্যেই কভার নষ্ট হয়ে যাবে এবং ডায়েরির পাতাগুলো ছিঁড়ে যেতে পারে। ডায়েরিটি ভালো করে দেখে কিনুন এবং যেন ৫*৭ ইঞ্চি পোস্টকার্ডগুলো এতে রাখা যায়। তবে বেশি বড় ডায়েরি কিনবেন না। সহজে বহন করা যায় এমন ডায়েরি কিনবেন।
রঙিন কালির কলম, পেন্সিল, জল রঙ ও হাইলাইটার কিনুন
ট্রাভেল জার্নাল লেখার জন্য আপনার পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো কলম কিনুন। তবে বল পেনের পাশাপাশি কিছু রঙিন কালির কলম, পেনসিল, জল রঙ ও হাইলাইটার কিনুন।

এগুলো আবশ্যিক না হলেও এগুলো ব্যবহার করলে আপনার জার্নালটি আকর্ষণীয় হবে। কিছু কিছু স্মৃতিময় ঘটনা, গুরুত্বপূর্ণ স্থানের নাম রঙিন কালির কলম দিয়ে লিখতে পারেন। তাছাড়া স্কেচের জন্য পেনসিল প্রয়োজন হবে।
সঙ্গে গ্লু, স্টিক ও টেপ রাখুন
জার্নাল লেখার সময় যদি কোনো ছবি যোগ করার প্রয়োজন হয় তাহলে গ্লুস্টিকের প্রয়োজন পড়বে। তাই সঙ্গে গ্লু, স্টিক ও টেপ রাখুন। তাছাড়া ডায়রির পাতাকে বিভিন্ন রঙের টেপ দিয়ে সাজাতে পারেন। গ্লুস্টিক বহন করা সহজ। অন্য আঠা কিংবা গাম বহন করলে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে।
রুলার ও কাঁচি সঙ্গে রাখুন
জার্নাল লেখার সময় কোনো কিছু কাটা কিংবা ছোট করার প্রয়োজন হতে পারে। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে সঙ্গে সর্বদা রুলার ও কাঁচি রাখা। রুলার থাকলে যেকোনো কাগজে সমানভাবে দাগ টানা সহজ হবে, মার্জিন করা সহজ হবে।

তবে একটি কথা অবশ্যই মাথায় রাখবেন। বিমানে ভ্রমণের সময় কাঁচি বহন করবেন না। কারণ বিমানে কাঁচি নিয়ে ভ্রমণ করলে আপনি গ্রেফতার হতে পারেন।
একটি পরিষ্কার ও প্রসারিত ফোল্ডার রাখুন
ট্রাভেল জার্নাল লেখার জন্য আপনার অনেক খুঁটিনাটি বিষয়ের প্রয়োজন হতে পারে। ছবি কিংবা ছোট বড় রঙিন কাগজের প্রয়োজন হতে পারে। সবগুলো জিনিস একত্রে সুন্দরভাবে গুছিয়ে রাখার জন্য একটি ফোল্ডার সঙ্গে রাখুন।

নয়তো এগুলো হারিয়ে যেতে পারে। প্লাস্টিকের বড় ফোল্ডার সঙ্গে রাখলে সবগুলো প্রয়োজনীয় জিনিস ওখানে গুছিয়ে রাখতে পারবেন।
সঠিক গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর জন্য মানচিত্র রাখুন
আপনি যদি বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন তাহলে অনলাইন থেকে সে দেশের মানচিত্র প্রিন্ট করে নিন। যখন শপিং মল, হোটেলের প্রয়োজন হবে তখন তা ব্যবহার করতে পারবেন। একটি সাদা কালো মানচিত্রের মধ্যে হাইলাইটার দিয়ে চিহ্নিত করে রাখুন আপনি কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন ইত্যাদি।
প্রবেশের সময়সীমা লিখুন
আপনি যখন কোনো দেশের ঐতিহ্যবাহী কোনো স্থান কিংবা জাদুঘর অথবা দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে যাবেন তখন হাতে ডায়েরি কিংবা প্যাড রাখুন। কারণ জার্নাল লেখার জন্য সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রয়োজন। একবার ভ্রমণ করে ও তথ্যগুলোতে একবার চোখ বুলিয়ে নিলে সব তথ্য মনে রাখা যায় না। তাই কিছু তথ্য টুকে রাখার প্রয়োজন হয়।
তাছাড়া যেকোনো স্থানে ঘুরতে গেলে প্রবেশের সময়সীমা লিখে রাখুন। আপনি কোন মাধ্যমে অর্থাৎ বাস, গাড়ি নাকি বিমানে গিয়েছেন তা উল্লেখ করে দিন। আপনার হাতে অল্প সময় থাকলে প্রথমে রাফভাবে লিখুন। পরবর্তীতে সুন্দর করে গুছিয়ে লিখবেন।
পরিবার ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
ট্রাভেল জার্নাল লেখা যদিও আপনার ইচ্ছে, রুচি, অভিরুচির উপর নির্ভর করে, তবুও আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের সাথে বিষয়টি শেয়ার করতে পারেন। পরিবারের অন্যান্যরা হয়তো উক্ত স্থান সম্পর্কে অধিক জানে, সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে জানে। তাই তারা আপনাকে যেকোনো তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারবে। প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ যোগ করতে পারেন। আবার ব্যক্তিগত তথ্যসমূহ বাদ দিতে পারেন।
থিম নির্বাচন করুন এবং নিজের অনুভূতিকে কাজে লাগান
একটি মূল থিম বা কেন্দ্রীয় অংশ নির্বাচন করা থাকলে পুরো লেখা সহজে লেখা যায়। তাই মূল থিম নির্বাচন করুন। মূল থিম নির্বাচন করে তার সুন্দর বর্ণনা লিখুন। আপনার আবেগ, অনুভূতির সঠিক ব্যবহার করুন। পুরো ভ্রমণ আপনার কেমন লেগেছে, আপনি কী কী দেখেছেন, আপনার কেমন অভিজ্ঞতা হলো ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত লিখুন।

কারণ কয়েক বছর পর যখন আপনি এই লেখাটি পড়বেন তখন আপনার কাছে খুব রোমাঞ্চকর মনে হবে। বর্ণনা ছোট করে লিখবেন না। যথাসম্ভব বড় করার চেষ্টা করুন। আপনি কোন হোটেলে খেয়েছেন, কোথায় থেকেছেন তার বিশদ বর্ণনা লিখতে পারেন।
অন্যান্য মানুষ সম্পর্কে লিখুন
ভ্রমণে গিয়ে নিশ্চয় আপনার বিভিন্ন মানুষের সাথে দেখা হয়েছে। তার মধ্যে কেউ কেউ খুব মজা করতে ভালবাসে। সেসব মানুষ সম্পর্কে লিখুন। আপনারা কোন কোন বিষয় খুব উপভোগ করেছেন তা সুস্পষ্টভাবে লিখুন।
ছবি তুলুন
কোনো ভ্রমণ ছবি তোলা ছাড়া পূর্ণতা পায় না। তাই ভ্রমণে গেলে ছবি তুলুন। ছবিগুলো ভ্রমণের ডায়েরিতে লাগিয়ে রাখতে পারবেন। ডিএসএলআর কিংবা ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে সুন্দর ছবি তোলা যায়। প্রয়োজনে কোনো স্মৃতি কিংবা স্থানের স্কেচ করতে পারেন।
ফিচার ইমেজ সোর্সঃ Theron and Darlene Nelsen