জাপান বিশ্বের লক্ষ লক্ষ পর্যটকের প্রিয় একটি গন্তব্যস্থল। ঐতিহাসিক নানা স্থাপনা, মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি আর সুস্বাদু সব খাবারের স্বাদ নিতে আসা অসংখ্য মানুষের আনাগোনায় মুখরিত থাকে দেশটি। বাংলাদেশ থেকেও আপনি সহজেই ঘুরে আসতে পারেন জাপান। থাকা, খাওয়া আর ঘোরাঘুরির কাজগুলো সাশ্রয়ী উপায়ে সেরে নেয়ার জন্য ঝটপট দেখে নিন এই ৬টি টিপস!
১. ট্রেনের পরিবর্তে চড়ুন বাসে
ট্রেন ভ্রমণ পর্যটকদের মাঝে পুরো পৃথিবীজুড়েই জনপ্রিয়। অনেকের কাছে ট্রেন মানেই আরামদায়ক ভ্রমণের নিশ্চয়তা। ক্ষেত্রবিশেষে সেটা অনেকটাই সত্যি। তবে জাপানের বাস সার্ভিসও বেশ উঁচু মানের। সব থেকে বড় কথা ট্রেনের তুলনায় বাস ভ্রমণ অনেক বেশি সাশ্রয়ী।
৭ দিনের একটি ট্রেন পাস সংগ্রহ করতে যেখানে খরচ পড়ে প্রায় ২৭৫ ডলার (১ ডলার=৮৪ বাংলাদেশি টাকা), সেখানে বাস পাস সংগ্রহের খরচ মাত্র ১০০-১৫০ ডলার। আর এই পাস আপনি দুই মাস জুড়ে ব্যবহারের সুযোগ পাবেন!
রাতের বাসে আপনার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হলে হোটেলে এক রাত থাকার খরচও বাঁচাতে পারবেন। টোকিও, হিরোশিমা, কিয়োটা, ওসাকা কিংবা নাগয়া, দূরবর্তী প্রায় সব শহরেই আপনি যেতে পারবেন বাস সার্ভিস ব্যবহার করে।
বাস পাস সংগ্রহ করতে না চাইলে নির্দিষ্ট গন্তব্যের জন্য আলাদাভাবেও টিকিট কেনার সুযোগ আছে।
Kosokubus.com এ গিয়ে সহজেই বাসের টিকিট বুকিং দিয়ে ফেলতে পারবেন।

২. জাপানের স্থানীয় ফাস্ট ফুড চেইনগুলোতে খাওয়া-দাওয়া সারুন
ফাস্ট ফুড মানেই জাংক ফুড ভেবে বসবেন না আবার! দেশটা যখন জাপান, তখন বুঝে নিতে হবে এখানকার স্থানীয় ফাস্ট ফুড চেইনগুলোর খাবার নিশ্চিতভাবেই হবে স্বাস্থ্যসম্মত। রাইস বোল, কম মশলা দেয়া মাংস, ভাত, সবজি আর বেকন দিয়ে তৈরি করা মজাদার বার্গার, মচমচে ডামপ্লিং আর ধোঁয়া ওঠা গরম স্যুপ দিয়ে সেরে নিতে পারবেন তিন বেলার খাবার। আর জাপানের বিখ্যাত সুশি তো পেয়েই যাবেন, নতুন করে সুশি নিয়ে কিছুই বলার নেই।

স্থানীয় কিছু ফাস্ট ফুড চেইনের নাম দেখে নিন-
- Sukiya
- Yoshinoya
- Mister Donut
- MOS Burger
২ ডলার থেকে শুরু করে ৬ ডলারের ভেতরেই এক বেলার খাবার সেরে নিতে পারবেন এই রেস্টুরেন্টগুলোয়।
৩. সংগ্রহ করুন মেট্রো পাস
টোকিও, ওসাকা বা হিরোশিমার মতো বড় শহরগুলো ঘুরে দেখার জন্য ট্যাক্সি বা উবারের সাহায্য নেয়া বেশ খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার। এর অর্ধেকেরও কম খরচে আপনি পুরো শহরই ঘুরে দেখতে পারেন, যদি মেট্রো পাস ব্যবহার করেন। কাজেই জাপানের বড় শহরগুলোতে পৌঁছে আপনার প্রথম কাজই হবে মেট্রো পাস সংগ্রহ করা।

৪. সংগ্রহ করুন গ্রুট (GRUTT) পাস
টোকিওর আর্ট গ্যালারি আর জাদুঘরগুলো কম খরচে ঘুরে দেখতে চান? তাহলে মাত্র ২০ ডলার খরচ করে কিনে ফেলুন গ্রুট পাস। টোকিওর ৮০টিরও বেশি আর্ট গ্যালারি আর জাদুঘর ঘুরে দেখতে পারবেন এই একটি পাস ব্যবহার করেই! ভাবা যায়!
ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ইমার্জিং সাইন্স এন্ড ইনোভেশন, ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ সাইন্স এন্ড নেচার কিংবা ইডো টোকিও মিউজিয়াম ঘুরে আপনি যে অভিজ্ঞতা নিজের ঝুলিতে পুরে ফেলবেন সেটার কোনো বিনিময় মূল্য আসলেই নেই! আর এজন্য গ্রুট পাস আসলেই বড়সড় একটা ধন্যবাদ পাওয়ার জোরালো দাবি রাখে!

দেখে নিন কোন কোন জায়গা থেকে কিনতে পারবেন এই গ্রুট পাস-
- The Tokyo Tourist Information Centre
- Asakusa Culture Tourist Information Center
- Tokyo Chuo City Tourist Information Center
৫. কম খরচে থাকার জায়গা খুঁজে বের করুন
থাকার জায়গা ঠিক করার সময় খেয়াল রাখতে হবে রেস্টুরেন্ট, শপিং মল আর বাস স্টপেজ যেন আশেপাশেই থাকে। কম খরচে এমন জায়গা খুঁজে পেতে সাহায্য নিতে পারেন এয়ার বিএনবির (AirBnB)। হোটেল বা হোস্টেল ছাড়াও পেয়ে যাবেন ছোটখাটো এপার্টমেন্ট।
৫০ থেকে ৬০ ডলারের মধ্যেই এই এপার্টমেন্টগুলোয় রাত কাটাতে পারবেন। ভাগ্য ভালো হলে আরো কম খরচে থাকার ব্যবস্থাও হয়ে যেতে পারে। তবে সেটার জন্য অনলাইনে একমোডেশন ওয়েবসাইটগুলোতে কিছুটা সময় দিতে হবে আপনাকে।

৬. খাবার খরচ আরো কিছুটা কমিয়ে আনুন
জাপানের গ্রোসারি স্টোরগুলোয় ঢুঁ মারুন সন্ধ্যার দিকে। আর ইভনিং ডিস্কাউন্টে কিনে ফেলুন টেইক এওয়ে বেন্টো ফুড বক্স। একটি বেন্টো ফুড বক্স কিনতে খরচ পড়বে ২ ডলারেরও কম। আর এক বক্সেই হয়ে যাবে আপনার এক বেলার খাবার। অর্থাৎ এভাবে তিন বেলার খাবার খরচ প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনার সুযোগ থাকছে।

এই ৬টি টিপস ঠিকঠাকভাবে অনুসরণ করতে পারলে ৫ দিন ৬ রাতের জাপান ভ্রমণে কেনাকাটা বাদে যাওয়া আসার এয়ার ফেয়ারসহ আপনার খরচ হতে পারে এক লাখ থেকে এক লাখ বিশ হাজার টাকা মাত্র! তবে আর দেরি কেন? টাকা না থাকলে জমিয়ে ফেলুন, বেরিয়ে পড়ুন আর ঘুরে দেখুন সূর্যোদয়ের দেশ জাপান!
ফিচার ইমেজ- thrifty nomads
তথ্যসূত্রঃ
- thrifty nomads
- travel japan
- japan food diary