হার্ডিঞ্জ ব্রিজ
বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রেলসেতু হিসেবে পরিচিত এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি পাকশি রেলস্টেশনের দক্ষিণে পদ্মা নদীর উপরে অবস্থিত। এটি ১৯০৯-১৯১৫ সালে নির্মাণ করা হয়। এর দৈর্ঘ্য ১,৭৯৩.৩২ মিটার বা ৫,৯০০ ফুট। এখানে দুইটি ব্রডগেজ রেললাইন রয়েছে।
নান্দনিক এই ব্রিজটি নির্মাণ করার জন্য ২৪ হাজার শ্রমিক দীর্ঘ ৫ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। এর প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন ব্রিটিশ ইন চীফ ইঞ্জিনিয়ার রবার্ট গেইলস, যিনি এই ব্রিজটি নির্মাণের মাধ্যমে সম্মানসূচক ‘স্যার’ উপাধিতে ভূষিত হন। ব্রিজটির নামকরণ করা হয় তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের নামে।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশেই রয়েছে লালন শাহ সেতু। এছাড়া এই ব্রিজটিকে ঘিরে পদ্মার পাড়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট।

লালন শাহ সেতু
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের অদুরে পদ্মা নদীর উপরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ‘লালন শাহ সেতু’। ১,৮০০ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সড়ক সেতু।
লালন শাহ সেতুটি হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সমান্তরাল হওয়ায়, এখান থেকেও হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এছাড়া নদীর সৌন্দর্য তো রয়েছেই।
কীভাবে যাবেন?
আপনি পাবনার যেখানেই থাকুন না কেন আগে আপনাকে রূপপুর যেতে হবে আর সেখান থেকে রিক্সা নিয়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ ব্রিজে যেতে পারবেন। উল্লেখ্য দুটি ব্রিজই কাছাকাছি।
চলন বিল

চলন বিল বাংলাদেশের সব থেকে বড় বিলের নাম। এছাড়া এটি বাংলাদেশের সমৃদ্ধতম জলাভূমির মধ্যে অন্যতম।
উত্তর বঙ্গের পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলা জুড়ে বিস্তৃত এই বিলের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পড়েছে পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলায়।
চলন বিলটি মূলত অনেকগুলো ছোট ছোট বিলের সমষ্টি। এর মধ্যে বেশিরভাগ বড় বিলের অবস্থানই পাবনা জেলায়; যেমন: বড় বিল, গজনা বিল, সোনাপাতিলা বিল, ঘুঘুদহ, চিরল বিল এবং গুরকা বিল ইত্যাদি।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সজ্জিত এই বিলটিকে কাছ থেকে না দেখলে অনুমান করা সম্ভব নয় যে, এটা কতটা সুন্দর হতে পারে। চলন বিল নামের থেকেও অনেক বেশি সৌন্দর্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই বিলের দিক-দিগন্ত জুড়ে।
প্রত্যেক ঋতুতে চলন বিল সেজে ওঠে ভিন্ন ভিন্ন সাজে। শীতকালে পানি শুকিয়ে যায়। বর্ষাকালে আবার তা কানায় কানায় ভরে ওঠে। এসময় বিশাল এই বিলের দিগন্তে সূর্যাস্তের দৃশ্য একটি মোহময় আবহ সৃষ্টি করে। এছাড়া নানা জাতের পাখিদের আনাগোনা মুগ্ধ করে সব ঋতুতেই।
সুচিত্রা সেনের স্মৃতি সংগ্রহসালা

কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেনের নাম শোনেনি এমন মানুষ পাওয়া ভার। বাংলা চলচ্চিত্রের এই বরণীয় নায়িকার পৈত্রিক নিবাস পাবনা শহরের গোপালপুর এলাকার হেমসাগর লেনে। বর্তমানে এখানে তাঁর একটি স্মৃতি সংগ্রহশালা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে সংগ্রহ করা হয়েছে তাঁর শৈশব ও কৈশরের নানা স্মৃতি। বর্তমানে এটি পাবনা জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
কীভাবে যাবেন?
পাবনা শহর থেকে ইজি বাইকে টেকনিক্যালের বা পলিটেকনিকের সামনে যেতে হবে। টেকনিক্যালের গেইটের ঠিক সামনেই রয়েছে সুচিত্রা সেনের স্মৃতি সংগ্রহশালা।
প্রমথ চৌধুরির পৈত্রিক নিবাস

প্রমথ চৌধুরীর নাম শুনে সাহিত্য পড়ুয়া ব্যক্তিরা হয়তো একটু নড়েচড়ে বসেছেন। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন আমি সেই প্রমথ চৌধুরীর কথাই বলছি। যিনি বাংলা সাহিত্যের অসংখ্য কালজয়ী গ্রন্থের লেখক।
বাংলা সাহিত্যে চলিত রীতির প্রবর্তক ও বীরবল খ্যাত এই মহান সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরীর পৈত্রিক নিবাস চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে। দীর্ঘ দিন ধরে তাঁর এই বসতভিটা অবৈধ দখলদারের দখলে ছিল। বর্তমানে দখল মুক্ত করে সেখানে একটি পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে।

আমার পাবনা ভ্রমণের ডাইরি থেকে একটি বিশেষ সংগ্রহ:
পাবনা জেলার একজন লোক তাঁদের অঞ্চলের দর্শনীয় স্থানের বর্ণনা দিতে গিয়ে আমাকে একটি গান শুনিয়েছিলেন। গানটি কে লিখেছে সেটা তিনি জানেন না তাই একে আমি লোকগানই বলব। পাবনার এই লোকগানটি আপনাদের সাথে শেয়ার না করে পারলাম না। তাই নীচে উল্লেখ করছি, আশা করি ভালো লাগবে।
গান:
৬৪টি জেলার মধ্যে
একটি জেলা পাবনা,
এই জেলাতে এলে সবাই
করে একটু ভাবনা।
পাবনা জেলার উপর দিয়ে
চলে রেল গাড়ি,
এই জেলাতে আছে কবি
বন্দে আলীর বাড়ি।
স্কয়ার আর হার্ডিঞ্জ ব্রীজ
এই জেলাতেই গড়া,
সব জেলারই পাগল এসে
পাবনা জেলায় ভরা।
পলিটেকনিক, ক্যাডেট কলেজ
আছে পেপার মিল,
এই জেলার মধ্যে বয়ে গেছে
বিশাল চলন বিল।
পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে
আছে ইপিজেড,
এই জেলার মধ্যে নামকরা এক
রায়বাহাদুর গেট।
পাবনা জেলায় উর্বর মাটি
ফসল ভালো ফলে,
এই জেলারই গামছা লুৃঙ্গি
সব জেলাতেই চলে।
পারমানবিক বিদ্যুৎ
পাবনা জেলায় হয়,
এই জেলারই কেঁচি ভালো
সব জেলাতেই যায়।
পাবনা জেলায় আছে অনেক
তাঁত গেঞ্জির মিল,
এই জেলার মধ্যে অবস্থিত
গন্ডহস্তি বিল।
এডওয়ার্ড পাবনা জেলার
সবচেয়ে বড় কলেজ ,
সব জেলারই মানুষ এখন
রাখে একটু নলেজ।
বিমান বন্দর চিনি কল
পাবনা জেলায় আছে,
পদ্মা নদী যমুনা,
এই জেলার অতি কাছে।
পাবনা জেলার কাশিনাথপুর
আছে বিশাল হাট,
এই জেলার মধ্যে নামকরা
নগর বাড়ি ফেরিঘাট।
অন্য জেলার মানুষ যখন
পাবনা জেলায় আসে,
এই জেলারই ঘি খাইতে
সবাই ভালোবাসে।
কৃষি ধান গবেষণা
পাবনা জেলায় আছে,
লালন শা সেতু কিন্তু
হার্ডিঞ্জ ব্রীজের কাছে।
শ্যামলী পাবনা জেলার
নামীদামি গাড়ী,
এই জেলাতে আছে নায়িকা
সুচিত্রা সেনের বাড়ী।
প্রযুক্তিতে পড়তে হলে
আসতে হবে পাবনা,
মেডিকেলে ভর্তি হলে
থাকবে না আর ভাবনা।
Feature Image: hatekhari.news