ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রামে ঐতিহাসিক স্থান যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও। এখানে পাহাড়, ঝর্ণা, নদী, সাগর আর শহরের যান্ত্রিকতা সবই আছে। এটি বাংলাদেশের অন্যান্য শহরের থেকে সম্পুর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির একটি শহর।
চট্টগ্রামকে বারো আউলিয়ার দেশ বলা হয়। মনে করা হয়, এই আউলিয়াদের আগমনের মাধ্যমেই বাংলাদেশে ইসলামের আগমন ঘটেছিল। আর এই আউলিয়ারা এসেছিলেন সমুদ্র পথে- শুনলেই বোঝা যায়, চট্টগ্রাম নামের সাথে সমুদ্র কতটা জড়িয়ে আছে। আমি আগের পর্বে লিখেছিলাম বারো আউলিয়াদের অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত জায়গাগুলো সম্পর্কে, আর আজকে লিখছি চট্টগ্রামের সমুদ্র সৈকত সম্পর্কে।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত

চট্টগ্রামের পতেঙ্গাতে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকতের নাম পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বা পতেঙ্গা সী-বীচ। এটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৪ কি.মি. দূরে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় নেভাল একাডেমী ও এয়ারপোর্টের নিকটে অবস্থিত।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে তাঁর সৌন্দর্যের জন্য মিনি কক্সবাজার বলা হয়। সৈকতের মৃদুমন্দ বাতাস আর বিস্তৃত জলরাশি সৈকত প্রেমীদের আনন্দে আত্মহারা করে তোলে। সরকারি ছুটির দিনে যেন পা ফেলার জায়গাটিও থাকে না।
সৈকতে পাবেন ২০ টাকায় ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হওয়ার স্বাদ নিতে, সী বাইকে চড়ে ঘুরে বেড়াতে, আবার মন চাইলে পারবেন স্পিড বোটে চড়ে সাগরের ঢেউয়ের সাথে আছড়ে পড়তে।
নেভাল বীচ
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে ১০ টাকা অটো ভাড়া দিয়ে পৌঁছে যেতে পারবেন বিমান বন্দর এলাকায় গড়ে ওঠা এই বীচে। কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত এই নেভাল বীচটি চট্টগ্রামের মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। বিকেল হলেই এখানে আড্ডা জমে সকল বয়সী মানুষের।
পারকি সমুদ্র সৈকত

আমরা এক সময় সমুদ্র সৈকত বলতে শুধুমাত্র কক্সবাজার ও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকেই বুঝতাম। এখন আর সেটা মেনে নেওয়া যায় না। কারণ এখন আমরা পরিচিত হয়েছি এমন কিছু সমুদ্র সৈকতের সাথে যার সৌন্দর্যকে অস্বীকার করা যায় না। চট্টগ্রামের পারকি সমুদ্র সৈকত তেমনই একটি সমুদ্র সৈকত, যা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
চট্টগ্রাম শহর থেকে কর্ণফুলী নদী পার হয়ে যেতে পারেন এই পারকি সমুদ্র সৈকতে। এক পাশে ঝাউ বন, অন্যপাশে সমুদ্রের বিস্তৃত জলরাশি নিমেষেই মন ভালো করে দেয়। এছাড়া সৈকতের ঝাউ বন ঘেঁষে উত্তর দিকে হেঁটে গেলেই দেখা যায় বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলী নদীর মোহনা।
এখানে স্পীড-বোটে চড়ে সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা সহ রয়েছে সী-বাইক বা ঘোড়ার পিঠে চড়ে সমুদ্র তীরে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থাও।
বাহারছড়া সমুদ্র সৈকত

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় অবস্থিত ৩৪ কি: মিঃ দীর্ঘ এই বাহারছড়ি সমুদ্র সৈকতটি ভিন্ন ধর্মী সমুদ্র সৈকত হিসেবে পরিচিতি পায়। এখানে যেতে যেতে আপনি দেখতে পাবেন পাহাড় থেকে শুরু করে বিস্তৃত ধানক্ষেত ও রাস্তার পাশে বয়ে চলা ছোট খাল।
সমুদ্র সৈকতটি খুব বেশি পরিচিতি না পেলেও, কেউ কেউ আসেন তীর ভাঙ্গা ঢেউ আর দ্বীপ জ্বলা সন্ধ্যার সুধা পান করতে। নীরবে নিভৃতে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের স্বাদ নিতে আপনাকে যেতে হবে এই বাহারছড়া সমুদ্র সৈকতে।
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত
চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডু উপজেলায় অবস্থিত সবুজ গালিচায় বিস্তৃত একটি সৈকতের নাম গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। স্থানীয়ভাবে এটি মুরাদপুর বীচ নামে পরিচিত। সীতাকুন্ডু বাজার থেকে পাঁচ কিঃমিঃ পথ পাড়ি দিলেই দেখা মেলে এই বীচের।

আগে যে কয়টি বীচের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তাঁর সবগুলোতেই সাগর পাড়ে কেওড়া বন রয়েছে; এখানেও রয়েছে, কিন্তু তা একটু অন্যরকম সৌন্দর্যের অধিকারী। কেওড়া বনে সবুজ গালিচায় বিস্তৃত ঘাস আর তার মাঝে কেওড়া গাছের শ্বাসমূল এর একটি বিশেষত্ব। বীচের এক পাশে বিস্তৃত জলরাশি আর অন্যপাশে সবুজের গালিচা পাতা কোনো দিকেই যেন সৌন্দর্যের কমতি নেই।
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতটিও সীতাকুণ্ডু উপজেলায় অবস্থিত। এখানেও আপনি নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে পারবেন, উপভোগ করতে পারবেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এই বীচের একটি বিশেষত্ব হলো, এখানে আপনি সমুদ্রের ভেতরে প্রায় আধ-কিলোমিটার পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারবেন। যদিও গুগল ম্যাপ অনুসারে এই আধ-কিলোমিটার এলাকা একটি খাল। তবু সমুদ্রের মতো স্রোত হওয়ায় সবাই একে সমুদ্র বলেই জানে।
খেজুরতলা বীচ
সৌন্দর্যের দিক থেকে চট্টগ্রামের অন্যান্য বীচের সাথে খেজুরতলা বীচের তুলনা করা যায় না। তবে বলা যায়, এখানে আপনি একই সঙ্গে নেভাল বীচ ও পতেঙ্গা বীচের স্বাদ পেতে পারেন। এখানে রয়েছে পাথরের বাঁধ, যেখানে বসে সমুদ্র দেখতে পারেন বা আড্ডা দিতে পারেন সঙ্গীর সাথে। এছাড়া হাঁটতে পারেন সবুজ ঘাস বিছানো তীর ধরে।
খেজুরতলা বীচের সত্যিকারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আপনাকে যেতে হবে সূর্যোদয়ের সময় বা পড়ন্ত বিকেলে। গোধূলি আলোয় বীচের সৌন্দর্য বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। এসময় যদি ফুটবল সাথে থাকে তবে তো কথাই নেই, আপনিও খেলতে পারেন সমুদ্র তীরের বালুর মাঠে।
অতিরিক্ত

শঙ্খ নদী: আমি যখন বান্দরবন গিয়েছিলাম তখনই প্রথম দেখেছিলাম পাহাড়ি ঢালে বয়ে চলা এক সাঙ্গু নদীকে। সে যেন পাহাড়ি রাস্তায় হেঁটে চলা রাজকন্যা। আর সেই রাজকন্যার স্থানীয় নামই শঙ্খ নদী।
শঙ্খ নদী বা সাঙ্গু নদী মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের মদক এলাকার পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে। কখনো চপল কখনো শান্ত হয়ে বয়ে চলা এই নদীতে নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন চট্টগ্রাম থেকেও।
কীভাবে যাবেন: ঢাকার সায়েদাবাদ সহ অনেক জায়গা থেকে চট্টগ্রামের বাস পাওয়া যায়। ভাড়া: ৫০০-১,২০০ টাকা
কোথায় থাকবেন: চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। শহর থেকে সহজেই উল্লেখিত সব জায়গায় যাওয়া যায়।
Feature Image: koijaba.com