হাওড়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। দুপুর একটা বাজে তখন ভারতীয় সময়ে। উলুবেডিয়ার টিকেট কেটে ১৭ নম্বর টার্মিয়ালের দিকে দৌড়ানো শুরু করলাম। বিকেলের মধ্যে ফিরে এসে রাতের ট্রেনে পুরুলিয়া যেতে হবে আমাদের। অন্যদিকে দল বড় হওয়াই সবাইকে নিয়ে ছুটতে বেশ দেরী হয়ে যাচ্ছে। শেষ মুহুর্তের একটি বগি ফাঁকা দেখে চেপে বসলাম।
সারা বিশ্বে ৪৫টিরও বেশি দেশে ডিক্যাথলনের শপ রয়েছে। এই কোম্পানি মূলত স্পোর্টস এর সকল ধরনের প্রোডাক্টের বিশাল একটি মাল্টি ন্যাশনাল শপ হিসেবে জায়গা করে আছে। তারই একটি আউটলেট রয়েছে কলকাতার হাওড়া ডিস্ট্রিকের উলুবেড়িয়া এলাকায়। চার দিনের রক ক্লাইম্বিং কোর্সের জন্য টুকিটাকি কেনাকাটা করতে এর থেকে ভালো জায়গা আর হয় না।

অনেকেই এখানে প্রথমবার, তাই একটা ছবি না নিলেই নয়।
সময় মতো ট্রেন ছাড়ল। সোজা বাংলাদেশ থেকে এসেছি, তাই সবাই বেশ ক্লান্ত ছিল। এক ঘন্টার ট্রেন জার্নিতে সবাই একটু ঝিমিয়ে নেয়ার সুযোগ পেলো। সময় মতো আমরা উলুবেড়িয়া পৌঁছে আউটলেটের দিকে রওনা হলাম। স্টেশন থেকে ২০ মিনিটের মতো লাগল। এরপর আমরা পৌঁছলাম ফাঁকা মাঠের মধ্যে ডিক্যাথলনের বিশাল এই আউটলেটে।
ঢোকার মুখেই দেখলাম হাডুডু প্রতিযোগিতা চলছে। বিভিন্ন কোম্পানির আর্থিক সহযোগিতায় বিজয়ী পাবেন এক লক্ষ টাকা পুরস্কার। আমাদের হাতে সময় ছিল না। তাই আর খেলা দেখতে দাড়াতে পারলাম না। সিকিউরিটি চেক করিয়ে ঢুকে গেলাম খেলোয়াড়, ট্রাভেলার, মাউন্টেনিয়ার, ট্রেকারদের স্বর্গ রাজ্যে।

কোনটা রেখে কোনটা নেব সেই চিন্তা চলছে। ছবিঃ লেখক
ঢুকতেই চোখে পড়ল ব্যাকপ্যাকের বিশাল লাইন। দরকারী সব সাইজের, সব ধরনের সুবিধা সম্বলিত এই ব্যাকপ্যাকগুলো ডিজাইন করা হয় যে স্পোর্টসের সেকশানে এগুলোর যথাযত ও গুণগত ব্যবহার করা যায়। খেলাধুলা ও এ্যাকটিভিটির ধরন অনুযায়ী সব ধরনের গিয়ার্স সারি সারি করে রাখা হয়েছে। এখানে ঢুকলে এই গিয়ার সম্রাজ্য দেখে যে কেউ পাগল প্রায় হয়ে যাবে।
একটি তাকে দেখলাম ট্রেকিং ও মাউন্টেনিয়ারিংয়ের জন্য বুট রাখা। যেটা দেখছি সেটাই পছন্দ হয়ে যাচ্ছে। সর্বনিম্ন দাম থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দামের মধ্যে সব ধরনের সুবিধা রাখার যে চেষ্টা করা হয়েছে এর জন্য এই শপটা আমার কাছে এত প্রিয়। মাউন্টেন এক্সপিডীশন গিয়ার্সগুলোর দিকে চোখ যেতেই আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না।

ট্রেকিং বুটের মহা মেলা। ছবিঃ লেখক
এক এক করে দেখতে থাকি সকল প্রোডাক্ট। বিদেশী অনেক নামি ব্যান্ডের তুলনায় এর মান এবং মূল্য বেশ আস্থা রাখার মতো। ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার উপর নির্ভর করেই সব প্রোডাক্টের মূল্য নির্ধারণ করা হয় এই আউটলেটে। তাই সব কিছুর মূল্যই ক্রয় ক্ষমতার ভেতরে লক্ষ্য করলাম।
আমি ও নাদিয়া আপু ৬০ লিটারের দুটি ব্যাকপ্যাক নিয়ে নিলাম। এই ব্যাগগুলোর রিভিউ ইন্টারনেটে আগে থেকেই দেখা সম্ভব, এছাড়া কোন ধরনের ফিচার আছে, কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে সবই এই কোম্পানি তার ওয়েব সাইটে উল্লেখ করে। তাই বাছাই করতে অসুবিধা হলো না। দলের বাকিরা তখন পুরো শপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই শপ এতটাই বড় যে একজন কে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে।

লেয়ারিং এর সব রাখা থরে থরে। ছবিঃ লেখক
এখানে ট্রেকিং, ক্লাইম্বিং, সুইমিং, ক্রিকেট, ফুটবল, রানিং, বক্রিং, বডি বিল্ডিং, স্পোর্টস গিয়ার্স, স্পোর্টস ক্লথিং, ব্যাকপ্যাকিং, সাইক্লিং সহ পুরো ভারতবর্ষে যতগুলো স্বীকৃত খেলাধুলা আছে তার সব ধরনের উপাদানই পাওয়া যায় বলে একজন কর্মী আমাকে জানালো।
সারিবদ্ধভাবে একটি জায়গায় বিভিন্ন সাইজের তাবু রাখা আছে। আমাদের দলের কেউ কেউ তাবু নিলেন একটি দুটি করে। দুইজনের ৩ সিজনের মোটামুটি তাবু যেখানে ৮ হাজার টাকায় কিনতে হয়, এখানে সেই ক্ষমতার তাবু মাত্র ২,০০০ রুপিতে পাওয়া যায়। এছাড়া ইনার, ক্লদিং, ছোট ব্যাকপ্যাক, স্লিপিং ব্যাগ সহ বেশ কিছু প্রোডাক্ট নেয়া হলো।

এই জায়গাটা রাখা তাবুপ্রেমীদের জন্য। ছবিঃ লেখক
আমাদের হাতে বেশী সময় ছিল না বলা চলে। তারপরও আমাদের কেনাকাটা শেষে অল্প একটু সময় আমরা পুরো শপটি ঘুরে কাটালাম। হাজার হাজার তাকের উপর সারি সারি করে খেলাধুলার সামগ্রি রাখা। অগনিত মানুষ প্রতিদিন অনেক দূর থেকে এই শপগুলোতে আসেন নির্ভরযোগ্য মানের স্পোর্টস গিয়ার্স কেনার জন্য। আর সব থেকে গর্বের বিষয় হলো এগুলোর অধিকাংশ প্রডাক্ট তৈরি হয় আমাদের বাংলাদেশে।
সব থেকে মজার ব্যপার হলো এখানে একবার ঢুকলে সময় যে কীভাবে পার হয়ে যায় সেটা বোঝা বেশ ঝামেলার। চারদিকে এত রকম প্রডাক্ট যার সব কিছু নেড়েচেড়ে দেখতে কমপক্ষে ৭ দিন সময় লাগবেই। আর যদি স্পোর্টস গিয়ার্সের পিপাসার্ত ব্যক্তি হয়ে থাকেন তাহলে তো কথাই নেই।

ক্রিকেট জোন। ছবিঃ লেখক
প্রতিটা প্রোডাক্টের সাথে এর নাম, ব্যবহার বিধি, উপাদান সহ সব ধরনের নির্দেশিকা দেয়া থাকে। তাই বুঝতে অসুবিধা হয় না কোন জিনিসটা কোনভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এদের প্রোডাক্টের পাশাপাশি রয়েছে প্রোডাক্ট ও সেকশান স্পেশালিস্ট। যেমন ধরা যাক একটা ব্যাকপ্যাক কেনা দরকার।
আপনার শরীরের উপযোগী করে ও কীভাবে ব্যাগের সেটিংস করলে আপনার ব্যাগের লোড সঠিক জায়গায় ডিস্ট্রিবিউট হবে ও কীভাবে সেই প্যাকটি নিয়ে আপনি স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারবেন তার জন্য একজন কনসালটেন্ট থাকেন। যে সব কিছু বুঝিয়ে দেবে আপনাকে। তাই নতুন কেউ না বুঝে এখানে চলে গেলেও চিন্তার কোনো কারণ নেই।

পকেটের সব পয়সা এই চেক এউট এরিয়াতেই শেষ হয়। ছবিঃ লেখক
আমাদের সময় ফিরিয়ে এসেছিল, আবার ওদিকে সন্ধ্যা নেমে আসছিল। তাই কেনাকাটার মালামাল সব নতুন প্যাকে ঢুকিয়ে রওনা দিলাম হাওড়ার উদ্দেশ্যে।
রুট ও খরচের খসড়া
হাওড়া স্টেশন থেকে উলুবেড়িয়ার লোকাল ট্রেন চলে। যে কোনো একটিতে উঠে পড়ুন। টিকেটের খরচ পড়বে ১০ রুপি করে। স্টেশনে নেমে ওভার ব্রিজ দিয়ে হাতের ডানদিকে মোড় নিয়ে বাইরে বেরোলেই অটো পাওয়া যাবে বোম্বে হাইওয়ের। ১০ রুপি আবার ভাড়া দিয়ে ওখানে নেমে আরেকটা টোটোতে করে সোজা নামা যাবে ডিক্যাথলনের সামনে। ভাড়া নেবে ১০ রুপি।
এখন কিন্তু সল্টলেকেও হচ্ছে একটা। আর এসব জায়গায় যাওয়া কিন্তু মোটেও ভালোনা,পকেট পুরো ফাঁকা হয়ে যায়
জ্বী ভাইইয়া। অভিশপ্ত এলাকা।