প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের একটি অংশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী পরিমাণ পর্যটক জড়ো হয়- যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে। পুরোটাই ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ হলেও কিছু অংশের মালিকানা যুক্তরাষ্ট্রের, কিছু অংশের মালিকানা যুক্তরাজ্যের, তাই এভাবে আলাদা আলাদাভাবে উল্লেখ করা। বিশ্ব কূটনৈতিক ব্যবস্থার অদ্ভুত খেয়াল!

যাই হোক, ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ বলতে প্রথমেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে সাদা বালুর সৈকতে হুড়োহুড়ি-ছোটাছুটি, সমুদ্রের স্বচ্ছ পানিতে ডাইভিং এবং স্নোরকেলিং, সৈকতের কাছেই পাহাড়ে হাইকিং এবং একইসাথে বোটে করে সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ!
তাই আজকে আমি এক ধরনের তালিকা করে দিচ্ছি যে ওখানে গেলে আপনি অবশ্যই যে কয়েকটি কাজ করবেন, সেগুলোর। তালিকা ধরে ধরে ইচ্ছাপূরণ করে নেবেন। শুরু করা যাক তাহলে।
১. নৌকায় করে বাক আইল্যান্ডে যাওয়া
যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র জাতীয় মেরিন পার্ক সমৃদ্ধ বাক আইল্যান্ডের অবস্থান সেইন্ট ক্রোয়া (St. Croix) থেকে আধা-দিনের দূরত্বে। যদিও বর্তমানে দ্বীপটির মেরিন পার্ক এবং কোরালগুলো কিছু অংশে মরে গেছে অতিরিক্ত কোরাল ব্লিচিংয়ের ফলে। তবুও দ্বীপের সৈকতটির প্রশস্ততা এবং পাম গাছের সারি এই দ্বীপটিকে করে তুলেছে ক্যারিবিয়ান দ্বীপগুলোর উদাহরণ হিসেবে।

বাক আইল্যান্ড ভ্রমণের জন্য সহায়ক কিছু ট্যুর কোম্পানি:
– বিগ বিয়ার্ড এডভেঞ্চার ট্যুরস (অর্ধেক দিন ভ্রমণের জন্য ৭৫ ডলার এবং পুরো দিনের ভ্রমণের জন্য ১০৫ ডলার)
– ক্যারিবিয়ান সি এডভেঞ্চার (অর্ধেক দিন ভ্রমণের জন্য ৭৫ ডলার)
– জলি রজার চার্টার্স (অর্ধেক দিন ভ্রমণের জন্য ৭৫ ডলার এবং পুরো দিনের ভ্রমণের জন্য ৯০ ডলার)
২. ঘুরে বেড়ান দ্য বাথে
ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসের অন্তর্ভুক্ত ভার্জিন গোর্দায় এর অবস্থান। এখানকার সংকীর্ণ সৈকত, সমুদ্রের উথালপাথাল ঢেউ এবং প্রচুর মানুষ দেখে প্রথমে বিরক্ত হলেও এখানকার গুহাগুলোর দিকে যেতে যেতে আপনিই টের পাবেন কেন এত পর্যটক ভিড় জমায় এখানে।
গুহামুখের কাছে বিশাল আকারের কিছু গ্রানাইট পাথর পরস্পর জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্রের দিকে মুখ করে। সমুদ্রের ঢেউ কখনো কখনো চলে আসছে পাথরগুলোর গা ছুঁয়ে যেতে। বহু বছরের সমুদ্রের পানির এরকম স্পর্শ এসব রুক্ষ পাথরকে দিয়েছে মসৃণতা। সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর জায়গাটা!

সমুদ্রের ঢেউ ঢেলে, বিশাল এসব পাথর পেরিয়ে দেখা মিলে টাইড পুলের। এখানে প্রবেশের ক্ষেত্রে অবশ্য জনপ্রতি ৩ ডলার খরচ করতে হবে।
৩. খাবারের সাথে মিউজিকের খোঁজে রেডহুকে
সেইন্ট থমাসের এই বন্দর নগরে দেখা মিলবে বেশ কিছু ভালো রেস্টুরেন্ট এবং বারের। লাইভ মিউজিকের সাথে বার্গার খেয়ে খোঁজ মিলবে স্থানীয় কিছু ক্লাবের। আপনি যদি সেইন্ট থমাসে গিয়ে কোথাও থাকতে চান, রেডহুকই হবে তার জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা।
এসব ছাড়াও এখান থেকে আপনি পাবেন ফেরির সুবিধা, যার মাধ্যমে সহজেই সেইন্ট জন দ্বীপের ক্রুজ বে’তে যেতে পারেন কিংবা ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জেও যেতে পারবেন।

৪. উৎসবে মেতে উঠুন সেইন্ট জন দ্বীপে
ট্যুরে ফূর্তি করতে চান? তাও ঘণ্টায় মাত্র এক ডলারে? দারুণ সব পানীয় সহ? তাহলে সেইন্ট জন আপনার জন্যই। মাত্র দুই হাজার মানুষের বসবাস এই দ্বীপে। কিন্তু এটিই পর্যটকে ভরপুর হয়ে যায় যখন অনেকেই সেইন্ট থমাসের অতিরিক্ত খরচাপাতি থেকে বাঁচতে এখানে এসে ওঠেন। এখানে পর্যটকদের জন্য প্রচুর বার রয়েছে এবং এগুলোর বেশীরভাগের সাথে রয়েছে লাইভ ব্যান্ডের মিউজিকের তালে তালে নেচে বেড়ানোর সুযোগ!
নোট: হারিকেন ইরমা এন্ড মারিয়ার ফলে এই দ্বীপ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সেখান থেকে অবশ্য বেশ দ্রুত সংস্কারও করে উঠতে পারছে। হারিকেনের ফলে বেশ কিছু হোটেল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিল মালিকরা। যাওয়ার আগে এই দ্বীপের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আপডেট নিতে পারেন এখান থেকে: usviupdate.com
৫. রিফ বে ট্রেইল ধরে হাইকিং
সেইন্ট জন দ্বীপের একেবারে কেন্দ্র থেকে এই ট্রেইলের সূচনা। যেতে যেতে চোখে পড়বে পুরনো চিনি চাষ ক্ষেত্র, পড়ে থাকা বড় আকারের পাথর খণ্ড, প্রাচীন পেট্রোগ্লিফ (পাথরের গায়ে খোদাই করে আঁকা চিত্র) এবং একটি পুরনো চিনির ফ্যাক্টরি। পুরো ট্রেইলটি বেশ সহজে পেরিয়ে যাওয়া যায়, তবে হাঁটতে গিয়ে ঘেমে যাবেন বেশ। ট্রেইলের শেষ প্রান্তে পৌঁছে তাই ছিমছাম সুন্দর সৈকত পেয়ে সমুদ্রে ডুব দিয়ে গোসলটাও সেরে ফেলা যায়।

৬. নিরিবিলি সল্ট আইল্যান্ডে ঘুরে বেড়ানো
প্রায় জন-মানবহীন ছোট্ট এই দ্বীপটি একসময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল লবণ সংগ্রহের পুকুরের জন্য। কাছেই রয়েছে স্নোরকেলিংয়ের সুব্যবস্থা এবং ডিঙি নৌকা চড়ে এসব লবণ সংগ্রহের পুকুরগুলোর কাছের প্রায় জন-মানবহীন শহরটি ঘুরে দেখা যায়। মজার ব্যাপার হলো, এই দ্বীপটির মালিকানা আছে একটি পরিবারের যারা এখনো যুক্তরাজ্য তথা ইংল্যান্ডের রানীর কাছে বাৎসরিক মাত্র এক পাউন্ড লবণ খাজনা দেওয়ার বিনিময়ে মালিকানা বজায় রাখছেন।

ভালো কথা, এখানে যেতে হলে আপনাকে নৌকা ভাড়া করে যেতে হবে। কোনো ফেরির ব্যবস্থা নেই।
৭. RMS Rhone-এ ডাইভিং কিংবা স্নোরকেলিং
RMS Rhone ছিল যুক্তরাজ্যের একটি মেইল শিপ। ১৮৬৭ সালে এক ঘূর্ণিঝড়ে সল্ট দ্বীপের তীরের কাছে গিয়ে ডুবে যায় জাহাজটি। মারা যায় জাহাজটিতে থাকা ১২৩ জন মানুষ। বর্তমানে এটিই ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ডাইভিংয়ের জন্য আদর্শ এবং জনপ্রিয় একটি জায়গা।

বহু বছর ধরে পানিতে ডুবে থাকার কারণে এই জাহাজটির গায়েই এখন জন্মেছে প্রবাল প্রাচীর। বহু মাছ এবং কোরালের বাসস্থানেও পরিণত হয়েছে এটি। সব মিলিয়ে ডাইভারদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে এই জায়গাটি। এখানে ডাইভিংয়ের জন্য আপনাকে যেতে হবে টরটোলা দ্বীপে। আপনি চাইলে পুরনো এই জাহাজের ধ্বংসাবশেষের ভেতরেও ঢুকে দেখতে পারবেন।
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের এই ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জগুলোতে বেড়াতে এসে প্রথমে মনে হতে পারে খালি তো কেবল সাগর আর পানি, মজার কিছু কই! ব্যাপারটা এখানেই যে আপনার নিজেকেই আকর্ষণীয় ব্যাপারগুলো খুঁজে নিতে হবে। এখানের তালিকা ধরে যা যা করতে বলা হয়েছে তারচেয়েও অনেক বেশী কিছুই অপেক্ষা করছে দ্বীপগুলোতে। বেড়াতে এলে চুপচাপ বসে না থেকে ঘুরে বেড়ান আশেপাশে। আপনিও দারুণ কিছু আবিষ্কার করে ফেলতে পারেন! ভ্রমণ শুভ হোক।
ফিচার ইমেজ: mdtgroup.com