যদি ভেবে থাকেন আপনি পৃথিবীর সবগুলো চমৎকার জায়গা সম্পর্কে জেনে গেছেন বা ঘুরে ফেলেছেন, তাহলে আপনার জন্যই এই আকর্ষণীয় লেখা। এই লেখায় এমন কিছু স্থানের লিস্ট করা হয়েছে যা সম্ভবত আপনার অজানা এবং অবশ্যই স্থানগুলো আপনার বাকেট লিস্টে রাখবেন কারণ এই জায়গাগুলোর সৌন্দর্যের তুলনা আপনার কল্পনারও বাইরে! এই লেখাটি আপনাকে বিশ্ব ভ্রমণের জন্য তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারে এবং দম বন্ধ করা সৌন্দর্যমণ্ডিত জায়গার গল্প জানিয়ে আপনাকে চমকেও দিতে পারে। তাই আপনি যদি কিছুদিনের মধ্যে দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য।
আর হ্যাঁ, লেখার একেবারে শেষে আপনার জন্য রয়েছে একটি বোনাস!
১) দ্য গ্র্যান্ড প্রিজম্যাটিক স্প্রিং, আমেরিকা
এই হট স্প্রিং অর্থাৎ গরম পানির হৃদ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হট স্প্রিং এর মধ্যে তৃতীয়। ফুটন্ত এই লেকের পানি খনিজ সমৃদ্ধ। এই পানির চারপাশে ব্যাক্টেরিয়া জন্মানোর ফলে পানিতে বিভিন্ন রং দেখা যায়, তা সবুজ থেকে লাল রং হতে পারে। নিউজিল্যান্ডের ফ্রায়িং প্যান লেক এবং ডমিনিকান রিপাবলিকের বয়েলিং লেকের পর এটির অবস্থান। এটির ৩৭০ ফিট ব্যাসরেখা যা কিনা একটি ফুটবল মাঠের চেয়েও বড়। এর দৈর্ঘ্য ২৬০ ফিট এবং ১৬০ ফিট প্রস্থ।
২) ক্যাপাডোসিয়া, তুরস্ক
তুরস্ককে সবাই রঙিন আর উজ্জ্বল ভূখণ্ড হিসেবেই চিনে থাকে। তবে সবাই তুরস্ক প্রদেশেরই এই ঐতিহাসিক এলাকার সৌন্দর্যের কথা জানে না। সূর্যোদয়ের শুরুতে এখানে এয়ার বেলুন বা প্যারাসুট ভ্রমণ শুরু হয়। এয়ার বেলুনে চড়ে আকাশে ভাসতে ভাসতে দেখতে পাবেন গভীর গিরিখাদ, ভ্যালি আর ফেইরি চিমনি।
৩) ম্যামথ লেক, ক্যালিফোর্নিয়া
নিজেকে এমন একটি জায়গায় কল্পনা করুন যেখানে একটি ভ্যালিতে হার্ট শেইপের একটি হট স্প্রিং অর্থাৎ গরম পানির হৃদ যা কিনা নাটকীয় দৃশ্যপটে ঘেরা, দারুণ হবে না? ম্যামথ অর্থ বৃহৎ বা বিশালাকার আর এর নামটিই পর্বতটির আকার, ভ্যালির বিস্তৃতি আর পর্বতটির কাঁচের মতো স্বচ্ছ পানি সম্পর্কে বলে দেয়।
৪) কাক্সলাউটেনেন হোটেল, ফিনল্যান্ড
‘দ্য আর্ক্টিক’ শব্দটি শুনে সবার প্রথমে আপনার মাথায় কোন চিন্তাটি আসে? যদি খুব বেশী ঠাণ্ডা হয় আর আপনার আরামের অভাব অনুভব হতে থাকে তাহলে নিজেকে এমন একটি তথ্যের জন্য প্রস্তুত করুন যা আপনার বাঁধাধরা চিন্তাকে পরিবর্তন করে দিবে। হ্যাঁ, জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত অত্যন্ত ঝকঝকে গ্লাস দিয়ে তৈরি ইগলু ধরনের হোটেলের ভিউ আপনার সবরকম পুরনো ধারণা ভেঙে দেবে। এই ইগলুগুলো বাইরের সৌন্দর্য আর নর্দার্ন লাইটের চমক উপভোগ করার জন্য দারুণ!
৫) সেনোটে ইক-কিল, মেক্সিকো
প্রাকৃতিকভাবে মাটির নিচের পানি সংরক্ষণ করা বা কুয়া বা কূপকে বলা হয় সেনোটে। আর মেক্সিকো সেনোটেতে সমৃদ্ধ একটি দেশ এবং সবচেয়ে সুন্দর সেনোটেগুলোর মাঝে ইক-কিল হলো অন্যতম। আপনি যদি এই শ্বাসরুদ্ধকর সুন্দর জায়গায় যেতে চান তবে আপনাকে ২৬ মিটার নিচে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। ইক-কিলের পানির গভীরতা ৪০ মিটার যেখানে এর ডায়ামিটার ৬০ মিটার।
৬) স্মু কেভ, স্কটল্যান্ড
স্মু কেভ বা স্কু গুহা স্কটল্যান্ডের একটি অন্যতম আকর্ষণীয় এবং পৌরাণিক গুহা। পাশাপাশি এটি ব্রিটেনের অন্যতম বড় সামুদ্রিক গুহা। স্মু এর অর্থ “একটি ছিদ্র” বা “লুকানোর স্থান”। সুতরাং ছবিতে দেখতেই পারছেন এটি খুব একটি জনবহুল জায়গা নয় এবং অবশ্যই এই জায়গাটি এক্সপেরিয়েন্স করার জন্য দারুণ!
৭) সোকোট্রা আইল্যান্ড, ইয়েমেন
সোকোট্রার গাছগুলোই সোকোট্রাকে “পৃথিবীর বুকে এলিয়েনদের স্থান” এমন একটি আবহ তৈরি করেছে। এই দ্বীপটিতে কোনো রাস্তা নেই, এই বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্যের জন্যেও এই স্থানটি খুব পরিচিত।
৮) ন্যাশনাল পার্ক,চ্যানেল আইল্যান্ড
নদীগর্ভ সার্ক দ্বীপটি সাউথওয়েস্টার্ন ইংলিশ চ্যানেলের চ্যানেল আইল্যান্ডের মধ্যে একটি। এবং এটি বিশ্বের লুকায়িত একটি মনোমুগ্ধকর জায়গার মাঝে একটি। এই দ্বীপের জনসংখ্যা মাত্র ৫০০ এর মত। গাড়ি এই দ্বীপের রাস্তায় নিষিদ্ধ, রোডে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র ট্রাক্টর এবং ঘোড়ায়-টানা যানবাহন ব্যবহার করা হয়।
৯) উইস্টেরিয়া টানেল, কিতাকয়ুসু, জাপান
এই স্থানটি ভ্রমণের অন্যতম প্রধান একটি কারণ হচ্ছে, এই বাগানে ২০ প্রজাতির অবিশ্বাস্য ১৫০ উইস্টেরিয়া ফুল গাছ রয়েছে। এই জাদুকরী সুন্দর টানেল বা সুড়ঙ্গপথের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে যেতে হবে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে অথবা মে মাসের শুরুতে।
১০) বাজোস ডেল তোরো, কোস্টারিকা
আলাজুয়েলা প্রদেশের বাজোস ডেল তোরো স্থানটি সবচেয়ে কম অনুসন্ধান করা একটি মনোরম স্থান। এই পথটি “হিডেন ট্রেজার ওয়াটারফল” বা লুকায়িত সম্পদের ঝর্ণার দিকে এগিয়ে গেছে। সুতরাং সময় নিন এবং কাঁচের মতো স্বচ্ছ পানির মধ্যে দিয়ে ট্রেইলের মাধ্যমে যাওয়া এবং নিচ থেকে উপরে ঝর্ণার কাছে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। যে ঝর্ণার সৌন্দর্য কখনো আপনি কল্পনাও করেননি!
১১) মার্বেল কেভস, চিলি
পাতাগনিয়ার এই মার্বেল কেভস ৬ হাজার ২০০ বছরে ঢেউয়ের কারণে তৈরি হয়েছে। এই প্রাকৃতিক বিস্ময়ের জায়গাটি পরিদর্শন করা যাবে শুধুমাত্র নৌকা দিয়ে। এই স্থানের আরেকটি চমৎকার বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা কিনা এই স্থানকে আরও রহস্যময় করেছে, তা হলো সময় বছরের সময় অনুযায়ী মার্বেল গুহাটির রং বদলায়।
১২) ইথা আন্ডারেসা রেস্টুরেন্ট, মালদ্বীপ
ইথা অর্থ মুক্তার রানী ।মালদ্বীপের রাঙ্গালি দ্বীপে সমুদ্রের ১৬ ফিট নিচে এই রেস্টুরেন্টটি অবস্থিত। ইথা বিশ্বের প্রথম রেস্টুরেন্ট যা কিনা সমুদ্রের নিচে পুরোটা গ্লাস দিয়ে তৈরি। এখানে আপনি শুকনো ও আরামদায়ক অবস্থায় থেকে একই সাথে হাজার হাজার সামুদ্রিক মাছ দেখতে দেখতে খাওয়াদাওয়া করতে পারবেন।
বোনাস:
তাদের জন্য যারা বই পড়া ছাড়া নিঃশ্বাস নিতে পারে না!
*বেইনিকে রেয়ার বুকস অ্যান্ড ম্যানুস্ক্রিপ্টস লাইব্রেরি, ইয়েল ইউনিভার্সিটি
এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম গ্রন্থাগার যেখানে আপনি দুর্লভ সব বই, পাণ্ডুলিপি এবং বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য নথিপত্র পাবেন। সেখানে একটি রুম আছে যা লাইব্রেরির সেন্ট্রাল অংশে এক লাখ আশি হাজার ভলিউম ধারণ করে এবং বেজমেন্টে রয়েছে আরও দশ লক্ষেরও বেশি ভলিউম। পরবর্তী জেনারেশনের জন্য ঐতিহ্য রক্ষা করতে এর তাপমাত্রা এবং শৈত্য দুটোই খুব সাবধানে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
ফিচার ইমেজ- youtube.com